মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

দগ্ধদের দেখতে হাসপাতালে ভিড় নয়: রাজনৈতিক নেতাদের সারজিসের মানবিক আবেদন

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২১, ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম

দগ্ধদের দেখতে হাসপাতালে ভিড় নয়: রাজনৈতিক নেতাদের সারজিসের মানবিক আবেদন

ছবি- সংগৃহীত

রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক আবেদনের এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত, বিশেষ করে দগ্ধদের দেখতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ করার জন্য তিনি জোর আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, এই ভিড় ও কোলাহল অজান্তেই রোগীদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

সোমবার (২১ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে সারজিস আলম লেখেন, "বিভিন্ন দলের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তি, নেতাকর্মীদের নিয়ে হাসপাতালে দগ্ধ আহতদের দেখতে যাওয়া আজকের জন্য দয়া করে বন্ধ করুন। আপনি হয়তো জানেন না আপনার অজান্তে এই পরিদর্শন কারও মৃত্যুর কারণও হতে পারে। প্লিজ।" তার এই আকুতি এই মুহূর্তে আহতদের জন্য দ্রুত চিকিৎসার পরিবেশ নিশ্চিত করার গুরুত্বকে তুলে ধরে।

আমাদের অনুসন্ধানে সারজিস আলমের পোস্টের কমেন্টবক্সে দেওয়া তার ব্যাখ্যায় এই আহ্বানের যৌক্তিক কারণ পাওয়া যায়। এনসিপির এই নেতা উল্লেখ করেন, "আপনি হয়তো ভালো নিয়তে গিয়েছেন। কিন্তু আপনার আশপাশে এমন অসংখ্য নেতাকর্মী আছেন যে আপনার সামনে ফুটেজ খেতে গিয়েছে, আপনাকে নিজের চেহারা দেখাতে গিয়েছে, রাজনৈতিকভাবে একটু এগিয়ে থাকতে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে গিয়েছে, কেউ হয়তো নিজের সাংগঠনিক সক্ষমতা দেখাতে গিয়েছে।" তিনি আরও যোগ করেন, "এই সামগ্রিক বিষয়গুলো রাস্তায় জ্যাম তৈরি করতে পারে, হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হতে পারে, একজন ডাক্তার, নার্স, ব্লাড ডোনার, স্বেচ্ছাসেবক কিংবা চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কারও পৌঁছাতে সামান্যতম দেরি একটা জীবন কেড়ে নিতে পারে। যেটা হয়তো আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না।"

বিশেষজ্ঞদের অভিমত এবং সারজিস আলমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দগ্ধ রোগীদের ক্ষেত্রে জীবাণু সংক্রমণ (ইনফেকশন) সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ। একজন সাধারণ মানুষের চামড়া জীবাণু প্রবেশে বাধা দিলেও, পুড়ে যাওয়া রোগীর উন্মুক্ত চামড়া ব্যাকটেরিয়ার জন্য সহায়ক হয়ে ওঠে। এই জীবাণু সংক্রমণ মাল্টিসিস্টেম অর্গান ডিসফাংশন পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর পরিবেশও অনেক সময় জীবাণু প্রবেশের জন্য সহায়ক হয়। তাই সেকেন্ড বা থার্ড ডিগ্রি বার্নের রোগীদের পরবর্তীতে মৃত্যুঝুঁকি থেকে বাঁচানো এক বিরাট যুদ্ধ।

সক্রিয় 'রিপোর্টার ভয়েস' অনুযায়ী, এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালের ভেতরে ভিআইপিদের আগমন, প্রোটোকল, মিডিয়া এবং উৎসুক জনতার ভিড় রোগীদের জন্য উল্টো ক্ষতির কারণ হতে পারে। বার্ন রোগীর চিকিৎসার অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো রোগীকে জটিলতা থেকে বাঁচানো। তার ওপর, এই দুর্ঘটনায় অধিকাংশ আক্রান্ত ৭-১৫ বছর বয়সের শিশু-কিশোর। তাদের নাজুক শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় হাসপাতালের ভেতরে অযথা ভিড় যেকোনো মূল্যে এড়িয়ে চলা উচিত।

সারজিস আলম তার পোস্টে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, "হাসপাতালে এদের দেখতে না গিয়ে আপনি রাজনীতিতে একটু পিছিয়ে পড়লেও মানুষ হিসেবে নিশ্চিত এগিয়ে থাকবেন।" তার এই মন্তব্য এই মুহূর্তে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার মানসিকতা পরিহার করে মানবিকতাকে প্রাধান্য দেওয়ার গুরুত্বের উপর জোর দেয়। এটি এই সংকটের সময়ে রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার একটি উদাহরণ হতে পারে।