মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

বিমান বিধ্বস্ত: নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের সন্ধানে জরুরি যোগাযোগ নম্বর, বাড়ছে উদ্বেগ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২১, ২০২৫, ০৬:৩৩ পিএম

বিমান বিধ্বস্ত: নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের সন্ধানে জরুরি যোগাযোগ নম্বর, বাড়ছে উদ্বেগ

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ও আহতের পাশাপাশি নিখোঁজ স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্বজনহারাদের পাশে দাঁড়াতে এবং নিখোঁজদের দ্রুত খুঁজে পেতে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় থেকে বেশ কয়েকটি জরুরি যোগাযোগ নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। এটি একটি জাতীয় শোকের মুহূর্ত, যেখানে নিখোঁজদের সন্ধানে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই ধরনের দুর্যোগে জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সমন্বিত উদ্ধার তৎপরতা কতটা জরুরি।

সোমবার (২১ জুলাই, ২০২৫) বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নিখোঁজ স্কুল শিক্ষার্থীদের বিষয়ে জরুরি যোগাযোগের জন্য নিম্নলিখিত নম্বরগুলো প্রকাশ করা হয়:

  • ১। মিলিটারি রেস্কিউ ব্রিগেড: ০১৭৬৯০২৪২০২

  • ২। সিএমএইচ বার্ন ইউনিট: ০১৭৬৯০১৬০১৯

  • ৩। সিএমএইচ ইমার্জেন্সি: ০১৭৬৯০১৩৩১১

  • ৪। মাইলস্টোন স্কুল (অ্যাডমিন অফিসার): ০১৮১৪৭৭৪১৩২

  • ৫। মাইলস্টোন স্কুল (ভাইস প্রিন্সিপাল): ০১৭৭১১১১৭৬৬

  • ৬। ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি নম্বর ৯৯৯: এই নম্বরে কল করলে বাংলাদেশ পুলিশের ইমার্জেন্সি সেল থেকে বার্ন ইউনিটগুলোর সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দেবে।

এই নম্বরগুলো প্রকাশ করায় অভিভাবক ও স্বজনদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও, নিখোঁজদের সংখ্যা এবং তাদের অবস্থা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের খোঁজ পেতে বিভিন্ন হাসপাতালে এবং দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে ভিড় করছেন।

সোমবার দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে ভয়াবহ আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল বলে জানা যায়, যাদের অনেকেই হতাহত হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট উদ্ধার অভিযান শুরু করে এবং পরে আরও দুটি ইউনিট যোগ দেয়। উত্তরাসহ আশপাশের বিভিন্ন ফায়ার স্টেশনের ইউনিটগুলো যৌথভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধার করা শুরু করে। পরবর্তীতে উদ্ধার অভিযানে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও যুক্ত হয়। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে গুরুতর আহত ও দগ্ধদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বর্তমানে, দগ্ধ অন্তত ৫০ জনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া উত্তরা এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালেও বহু দগ্ধ ও আহত শিক্ষার্থী ভর্তি আছে বলে আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) নিশ্চিত করেছে যে, বিমানটি দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করেছিল এবং এর মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যেই এটি উত্তরা মাইলস্টোন কলেজের ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়।

এই মর্মান্তিক ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক শোক বার্তায় বলেছেন, "বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ।" তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসহ সব কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ প্রদান করেছেন।

এই দুর্ঘটনা কেবল একটি সামরিক প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনা নয়, এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ঝুঁকি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করেছে।