মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

দুটি শিশুর পরিবার খুঁজছেন তমা মির্জা,

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২১, ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম

দুটি শিশুর পরিবার খুঁজছেন তমা মির্জা,

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দেশজুড়ে যখন শোকের মাতম, তখন এই ভয়াবহ দুর্যোগে নিখোঁজ ও আহত শিশুদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী তমা মির্জা। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুটি শিশুর পরিবার খুঁজে বের করার জন্য মানবিক আবেদন জানিয়েছেন, যা বিনোদন অঙ্গনেও একাত্মতা ও সহানুভূতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনার ভয়াবহতাকেই তুলে ধরেনি, বরং সেলিব্রিটিদের সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং দুর্যোগ মুহূর্তে গণমানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রবণতাকেও আলোকিত করেছে।

 

সোমবার (২১ জুলাই, ২০২৫) দুপুরে সংঘটিত এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে এবং আহত হয়েছেন অনেকে। আহতদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন বর্তমানে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার পর থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে অভিভাবক, স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিড় বাড়তে থাকে। অনেক শিশু-শিক্ষার্থীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হলেও, এখনও অনেকের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।

এই পরিস্থিতিতেই মানবিক হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অভিনেত্রী তমা মির্জা। তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দুটি নিখোঁজ শিশুর পরিচয় শনাক্তে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন। একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, "এই বাচ্চাটা কে, কেউ চিনলে জানাবেন প্লিজ। ও আমার স্কুল ফ্রেন্ডের ভাইয়ের অফিসে আছে। সেফ আছে, তবে ও নিজের ঠিকানা বা পরিচয় কিছুই বলতে পারছে না। কেউ চিনতে পারলে হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।"

আরেকটি পোস্টে তিনি জানান, "এই শিশুটিকে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল থেকে ঢাকা বার্ন ইউনিটে আনা হচ্ছে। এখনো কোনো অভিভাবকের খোঁজ মেলেনি। কেউ যদি চিনে থাকেন, তাহলে দয়া করে ০১৮১১৬৯৬০৩৩ নম্বরে যোগাযোগ করুন।"

তমা মির্জার শেয়ার করা তথ্য অনুযায়ী, এই দুটি শিশুই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা মিডিয়ামের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। বার্ন ইউনিটে নেওয়া শিশুটির নাম মো. জুনায়েত হাসান এবং নিরাপদে রাখা অপর শিশুটির নাম মোছা. আসমাউল হুসনা জায়রা। তার এই পোস্টগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে এবং বহু মানুষ শেয়ার করে শিশুদের পরিবার খুঁজে বের করতে সহায়তা করছেন।

 

সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজেআই মডেলের প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিমানটি দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে এবং ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১২ মিনিট পর ১টা ১৮ মিনিটে সেটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে আছড়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়।

এই ভয়াবহ ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে এবং ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট, বিজিবি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কাজ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। এই দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই কোমলমতি শিক্ষার্থী।

 

তমা মির্জার এই মানবিক উদ্যোগ দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে সেলিব্রিটিদের সামাজিক দায়বদ্ধতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যখন একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে, তখন কেবল সরকারি সংস্থাগুলোই নয়, সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরাও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। বিশেষ করে, তমা মির্জার মতো জনপ্রিয় তারকাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় করা পোস্টগুলো দ্রুত লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, যা জরুরি তথ্য প্রচারে এবং নিখোঁজদের সন্ধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, সোশ্যাল মিডিয়া কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং সংকটের সময়ে এটি একটি শক্তিশালী মানবিক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে। তারকাদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে আসা এসব বার্তা সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্রুত সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মনোভাব তৈরি করে। এটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কমিউনিটি এনগেজমেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

 

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা দেশের জন্য এক গভীর শোক নিয়ে এসেছে। এই দুঃসময়ে তমা মির্জার মতো তারকাদের মানবিক উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। দুটি শিশুর পরিবার খুঁজে বের করার এই প্রচেষ্টা কেবল তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সমগ্র বিনোদন অঙ্গন এবং সমাজের কাছে একটি বার্তা দেয় যে, দুর্যোগে সবাই মিলেমিশে কাজ করলে মানবিক সংকট মোকাবিলা সহজ হয়। আশা করা যায়, তমা মির্জার এই আবেদন সফল হবে এবং নিখোঁজ শিশুরা তাদের পরিবারের কাছে ফিরতে পারবে। এই শোকাবহ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে, ভবিষ্যৎ দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্মিলিত মানবিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা হবে – এটাই জাতির প্রত্যাশা।