রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

দুই ভাইয়ের এক বউ: হিমাচল প্রদেশের অদ্ভুত প্রথা ও তার কারণ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২০, ২০২৫, ০২:১১ পিএম

দুই ভাইয়ের এক বউ: হিমাচল প্রদেশের অদ্ভুত প্রথা ও তার কারণ

বিশ্বজুড়ে নানা সংস্কৃতিতে বিয়ের ভিন্ন ভিন্ন প্রথা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে ভারতের হিমাচল প্রদেশের এক নারীর দুই ভাইকে বিয়ে করার ঘটনা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তবে এই ঘটনাকে বর ও কনে উভয়ই তাদের সম্প্রদায়ের একটি বহু পুরোনো প্রথা হিসেবে দাবি করছেন। তারা জানান, এই প্রথা অনুসারেই তারা এই বিয়ের আয়োজন করেছেন, যা স্থানীয় সংস্কৃতিতে এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

 

আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে হিমাচলের সিরমৌর জেলার শিলাই গ্রামের স্থানীয় ট্রান্স-গিরি এলাকায়। গত ১২ জুলাই কুনহাট গ্রামের তরুণী সুনীতা চৌহানকে বিয়ে করেন দুই ভাই—প্রদীপ নেগি ও কপিল নেগি। এই বিয়ের উৎসব তিন দিন ধরে চলেছিল, যেখানে শত শত মানুষ আমন্ত্রিত ছিলেন। ছিল পাহাড়ি গান, ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং উৎসবের এক বিশেষ আমেজ। প্রদীপ সরকারি চাকরি করেন, আর কপিল বিদেশে কর্মরত। এই দুই ভাই হিমাচলের 'হাট্টি' সম্প্রদায়ের সদস্য।

 

মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, 'হাট্টি' সম্প্রদায়ের মধ্যে একসময় এক নারীকে একাধিক ভাই মিলে বিয়ে করার রীতি প্রচলিত ছিল, যার নাম 'হাট্টি পলিয়ান্দ্রি'। এই ধরনের বিয়েতে দুই স্বামী ও স্ত্রী একসঙ্গে সম্মিলিতভাবে সংসার করেন এবং সাধারণত এতে কোনো দ্বন্দ্ব হয় না। বরদের ভাষায়, এই বিয়ে তারা সামাজিকভাবে স্বীকৃতভাবে করেছেন এবং এতে তারা গর্বিত। তাদের মতে, এটি পারিবারিক ঐক্য ও পারস্পরিক সহযোগিতার একটি দৃষ্টান্ত, যা তাদের সংস্কৃতির একটি বিশেষ দিক।

নববধূ সুনীতা চৌহান এই বিষয়ে বলেন, "অনেকে ভাবতে পারেন আমি হয়তো কোনো চাপে পড়েই এই বিয়েতে রাজি হয়েছি। কিন্তু সেটা একদমই সত্যি নয়। সিদ্ধান্তটা আমার নিজস্ব ছিল এবং আমি আমাদের বন্ধনকে সম্মান জানিয়ে এই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাই।" তার এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, তিনি স্বেচ্ছায় এই প্রথায় অংশ নিয়েছেন এবং এটিকে তার সংস্কৃতির অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

 

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, তিন বছর আগে হাট্টি সম্প্রদায়কে ভারতের তপশিলি জনজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্থানীয় সূত্র বলছে, শুধু বাধানা গ্রামেই গত ছয় বছরে এমন অন্তত পাঁচটি বিয়ের উদাহরণ পাওয়া গেছে। তাই সম্প্রদায়ের অনেকে বলছেন, এমন ঘটনা এখন খুব একটা বিরল নয়। এটি প্রমাণ করে যে, এই প্রাচীন প্রথাটি এখনও কিছু ক্ষেত্রে প্রচলিত আছে এবং এটি আধুনিক সমাজের মধ্যেও তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। এই ধরনের প্রথাগুলো সমাজবিজ্ঞানীদের জন্যও গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র তৈরি করে, যেখানে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং তার বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা যায়।

 

হিমাচল প্রদেশের এই অদ্ভুত বিয়ের প্রথাটি বিশ্বজুড়ে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এটি একদিকে যেমন একটি প্রাচীন প্রথার টিকে থাকার গল্প বলে, তেমনি অন্যদিকে আধুনিক সমাজে এর গ্রহণ যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার সংঘাতের মধ্যেও কিছু সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব রীতিনীতিকে ধরে রাখতে চায়। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, পৃথিবীর প্রতিটি কোণেই ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি এবং তাদের নিজস্ব জীবনযাপন পদ্ধতি বিদ্যমান।