মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

বিমান বিধ্বস্তে শোক জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভিডিও বার্তা:‍‍`আমার বলার কোনো ভাষা নেই‍‍`

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২১, ২০২৫, ১০:৫১ পিএম

বিমান বিধ্বস্তে শোক জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভিডিও বার্তা:‍‍`আমার বলার কোনো ভাষা নেই‍‍`

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই মর্মান্তিক ঘটনায় তিনি নিজেকে বাকরুদ্ধ এবং শোকাহত বলে উল্লেখ করেছেন।

সোমবার (২১ জুলাই) রাত ৯টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তার এই ভিডিও বার্তাটি পোস্ট করা হয়। ভিডিও বার্তায় আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন, "আমার বলার কোনো ভাষা নেই। কীভাবে শুরু করবো তা বুঝতে পারছি না। আমার মতো সারাদেশের লোক আজ হতবাক। এরকম এক কাণ্ড ঘটতে পারে আমরা কেউ কল্পনা করিনি, কারও ধারণার মধ্যে ছিল না। কিন্তু অবিশ্বাস্য জিনিস আমাদেরকে হঠাৎ করে গ্রহণ করতে হয়েছে।" তার এই কথাগুলো দুর্ঘটনার আকস্মিকতা এবং এর ভয়াবহতা তুলে ধরে।

তিনি আরও বলেন, "মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের যে দুর্ঘটনা- প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এই কচি শিশুদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ল, আগুনে পুড়ে মরল। তাদের মা-বাবাদের আমরা কী জবাব দেব, কী বলবো তাদেরকে। আমরা নিজেদেরকেই তো জবাব দিতে পারছি না। অজানা শিশুদের মুখ চোখে ভেসে উঠছে।" তার এই বক্তব্য নিহত কোমলমতি শিশুদের প্রতি গভীর শোক এবং তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখ করেন, "এ ঘটনায় সারা জাতি হতভম্ব, বাকরুদ্ধ। শোকাহত বললে খুব কম বলা হবে। এ দুর্ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। এখনো হাসপাতালে লাশ আসছে, কেউ হাসপাতালে মারা যাচ্ছে। মা-বাবা এখনো খোঁজ নিচ্ছে- ‘আমার সন্তান কোথায়। তাদের আর চেনা যাবে কিনা। যাদের লাশ দেখছি তাদের মধ্যে আমার সন্তান আছে কিনা।’" এই চিত্রটি দুর্ঘটনার পর সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় এবং পরিবারের সদস্যদের অসহায়ত্বকে তুলে ধরে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "এদের কাউকে পৃথক করার তো কোনো উপায় নেই। এরা সবাই আমাদের সন্তান। হঠাৎ করেই তারা আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আমরা অবশ্যই তদন্ত করবো। কিন্তু তদন্ত করলে তো আর তারা ফিরে আসবে না। আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে।" তার এই কথাগুলো তদন্তের আশ্বাস এবং আহতদের চিকিৎসায় সরকারের অঙ্গীকারের ইঙ্গিত দেয়।

তিনি সবার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, "আমি সবার কাছে অনুরোধ করছি হাসপাতালে কেউ ভিড় করবেন না। যারা আহত তাদের জন্য এটা ভালো না। কাজেই দূর থেকে তাদের জন্য দোয়া করেন সবাই।" এই আহ্বানটি আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে এবং হাসপাতালের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে অত্যন্ত জরুরি।

উপদেষ্টা আরও বলেন, "আমরা আহত-নিহতদের মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন সবার কাছে আমাদের সহানুভূতি জানাচ্ছি, সান্ত্বনা জানাচ্ছি। আমরা তাদের জন্য শোক দিবস ঘোষণা করেছি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) শোক দিবস। আমরা সবাই মিলে তাদের কথা স্মরণ করবো। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করব, রুহের মাগফিরাত কামনা করব। তাদের জন্য দেশের সবাই দোয়া করছি।" এই ঘোষণা এবং আহ্বান জাতীয় পর্যায়ে শোক পালন এবং নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের গুরুত্ব তুলে ধরে।

উল্লেখ্য, সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়। দুর্ঘটনা মোকাবিলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বৈমানিকসহ ২০ জন নিহত এবং ১৭১ জন আহত হয়েছেন।