মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত:শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আঘাত, নিহত ১,দগ্ধ ২৭,জুনায়েতের অভিভাবক নিখোঁজ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২১, ২০২৫, ০৪:৪৪ পিএম

উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত:শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আঘাত, নিহত ১,দগ্ধ ২৭,জুনায়েতের অভিভাবক নিখোঁজ

ছবি- সংগৃহীত

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানটি বেলা ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করেছিল এবং দুপুর দেড়টার কিছু সময় পর এটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি সরাসরি মাইলস্টোন স্কুলের 'হায়দার হল' নামের ভবনটিতে আঘাত হানে এবং এর পরপরই ভবনটিতে আগুন ধরে যায়।

মাঠ পর্যায়ের তথ্যানুযায়ী, মাইলস্টোন কলেজের প্রভাষক রেজাউল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ছুটির আগ মুহূর্তে বা ঠিক ছুটির সময়ই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, "একটা প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান সরাসরি বিল্ডিংয়ে আঘাত করে। সেটা জুনিয়র সেকশনের বিল্ডিংয়ে পড়ে, নার্সারি, ওয়ান, টু, থ্রি- এসব ক্লাস ওই বিল্ডিংয়ে হয়। বিল্ডিংয়ের গেটে একেবারে গর্ত হয়ে আগুন ধরে যায়।" মাইলস্টোন কলেজের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে উপস্থিত হয়ে জানান, ক্লাস শেষ হওয়ার পর কোচিং ক্লাস চলছিল এবং ভেতরে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ বিকট শব্দে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এ সময় আশপাশে হতাহত অনেকের দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাম্বুলেন্সে করে অনেককে আশপাশের হাসপাতালগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। মাইলস্টোন কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হাবিবুর জানান, তিনি ক্লাস শেষ করে বের হওয়ার সময় ক্যান্টিনের সামনে বিকট শব্দে আগুন ধরে যেতে দেখেন।

আহতদের চিকিৎসা ও নিখোঁজ জুনায়েত: আহতদের মূলত তিনটি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে: কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক)। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের ব্যাগে করে একজনের লাশ নিয়ে আসা হয়েছে। আহত অবস্থায় ৮ থেকে ১০ জন চিকিৎসাধীন আছেন, যাদের অবস্থা গুরুতর নয়। তবে, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।

এই দুর্ঘটনায় তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জুনায়েত হাসানকে দগ্ধ অবস্থায় বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত তার অভিভাবকের খোঁজ মেলেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পোড়া আইডি কার্ডের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। একজন চিকিৎসক জুনায়েতের ছবি পোস্ট করে তার অভিভাবকের সন্ধানে একটি ফোন নম্বর (০১৮১১৬৯৬০৩৩) দিয়েছেন। বেশ কজনকে হেলিকপ্টারে করে সিএমএইচে নেওয়া হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

উদ্বেগ ও শোক: এই ঘটনায় বেশ উদ্বিগ্ন হয়েছেন ইসলামি আলোচক ও আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। সোমবার দুপুর ৩টার দিকে তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট করেন। পোস্টে আহমাদুল্লাহ লেখেন, "উত্তরার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছি, তিনি সবাইকে হেফাজতে রাখুন।"

এদিকে, এই ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, "এই দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ।" প্রধান উপদেষ্টা আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসহ সব কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সরকার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে।

উদ্ধার অভিযান: বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট এবং দুই প্লাটুন বিজিবি ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা লিমা খান জানান, প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পেরেছেন যে বিমানটি মাইলস্টোন কলেজের ক্যান্টিনের ছাদে গিয়ে পড়েছে। বিধ্বস্ত হওয়া প্রশিক্ষণ বিমানটিতে স্কোয়াড্রন লিডার তোকির নামের একজন পাইলট ছিলেন বলে জানা গেছে, যার খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।