রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

বাংলাদেশে কীভাবে হয়েছে ১২টি জাতীয় নির্বাচন?

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৭, ২০২৫, ০৪:০১ পিএম

বাংলাদেশে কীভাবে হয়েছে ১২টি জাতীয় নির্বাচন?

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনের মধ্যে মাত্র চারটি নির্বাচন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে, যা অনুষ্ঠিত হয়েছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। বাকি নির্বাচনগুলো দলীয় সরকার বা সামরিক শাসনের অধীনে হওয়ায় ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ড. ইউনূস, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় নির্বাচন, যেখানে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসনে জয়লাভ করে। ১৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও বিরোধী দল ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তোলে এবং ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫৫.৬১%। এই সংসদের মেয়াদ ছিল ২ বছর ৬ মাস। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সামরিক শাসনের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচন, যেখানে ২৯টি দল অংশ নেয় এবং ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫১.২৯%।

বিএনপি ২০৭টি আসন লাভ করে, তবে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দল কারচুপির অভিযোগ তোলে। এই সংসদের মেয়াদ ছিল ৩ বছর। ১৯৮৬ সালের ৭ মে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে তৃতীয় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আওয়ামী লীগ অংশ নিলেও বিএনপি ও অন্যান্য দল বর্জন করে। জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসনে জয়ী হয় এবং ২৮টি দল অংশ নেয়। ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৬.৭১%। এই নির্বাচনেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে এবং সংসদের মেয়াদ ছিল ১৭ মাস।

১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অধিকাংশ প্রধান রাজনৈতিক দল বর্জন করায় বিতর্কিত হয়। ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫১.৮১% এবং জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসনে জয়লাভ করে। ৮টি দল অংশ নেওয়া এই সংসদের মেয়াদ ছিল ২ বছর ৭ মাস। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পঞ্চম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা বিএনপি জয়লাভ করে। ৭৫টি দল অংশ নেয় এবং ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫৪.৪৫%। বিএনপি ১৪০টি এবং আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন পায়। এই সংসদের মেয়াদ ছিল ৪ বছর ৮ মাস। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকারের অধীনে ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা সকল প্রধান রাজনৈতিক দল বর্জন করে। ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ২৬.৫৪% এবং বিএনপি ২৭৮টি আসনে জয়ী হয়, যেখানে ৪৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন বিচারপতি হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে বর্ণনা করা হয়। আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয়লাভ করে এবং ভোটার উপস্থিতি ছিল ৭৪.৯৬%। ৮১টি দল অংশ নেয় এবং এই সংসদের মেয়াদ ছিল ৫ বছর। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। ৫৪টি দল অংশ নেয় এবং ভোটার উপস্থিতি ছিল ৭৫.৫৯%। আওয়ামী লীগ ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে প্রাথমিকভাবে সংসদ বর্জন করে। এই সংসদের মেয়াদ ছিল ৫ বছর।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নবম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা পর্যবেক্ষকদের মতে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩৮টি দল অংশ নেয়। ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮৭.৭৩%। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দশম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা বিএনপি ও অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল বর্জন করে। আওয়ামী লীগ ও তার জোটের ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। ১২টি দল অংশ নেয় এবং আওয়ামী লীগ ২৩৪টি আসনে জয়লাভ করে। ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪০.৪%। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিএনপি অংশ নেয়। এই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে, যা পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়।

৩৯টি নিবন্ধিত দল অংশ নেয় এবং ১,৮৬৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮০.২০% এবং আওয়ামী লীগ ২৫৮টি আসনে জয়লাভ করে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো বর্জন করে।

শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসে। এই নির্বাচনটি দেশে ও বিদেশে বিতর্কিত হয় এবং "ডামি নির্বাচন" হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এই নির্বাচনের ফলস্বরূপ ছাত্র ও সাধারণ জনগণের গণঅভ্যুত্থানে ছয় মাসের মধ্যেই সরকার পতন হয়। বর্তমানে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আশা করছে। আগামী নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং বর্তমান সরকার দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।