জুলাই ২৮, ২০২৫, ০১:১৮ পিএম
গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে ঘিরে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিষয়টি জানাতে পারেন বলে সরকারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ওই সূত্রগুলো আরও বলেছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ করবে সরকার। ইসির কাছে সরকারের দিক থেকে এ–সংক্রান্ত বার্তা আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই পৌঁছানো হবে। অন্যদিকে, ৫ আগস্টের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করার বিষয়টি এখন অনেকটাই নিশ্চিত।
এরই মধ্যে জুলাই সনদের একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করবে কমিশন।
গতকাল রোববার সকালে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনার শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সোমবারের মধ্যে জুলাই সনদের খসড়া দলগুলোকে পাঠানো হবে। জাতীয় সনদ সইয়ের জন্য চলমান আলোচনায় একটি দিন বরাদ্দ রাখা হবে।
সনদের খসড়া নিয়ে সংলাপে আলোচনা করা হবে না উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, "যদি বড় রকমের মৌলিক আপত্তি ওঠে, তাহলে আলোচনায় আনব, না হলে আনব না। আপনাদের (রাজনৈতিক দলগুলো) পক্ষ থেকে মতামত দেওয়া হলে সেটা সন্নিবেশিত করে প্রাথমিক সনদে ভূমিকা-পটভূমি থাকবে এবং অঙ্গীকারের জায়গা থাকবে।"
তবে বিভিন্ন দলের মধ্যে এমন আলোচনাও আছে, জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার বিষয়টি যাতে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আশ্বস্ত করতে চাইছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে ১৩ জুন বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
অবশ্য লন্ডন বৈঠকের ঘোষণার পর নির্বাচনের দৃশ্যমান তৎপরতা না থাকায় বিএনপির নেতাদের মধ্যে একধরনের সংশয় তৈরি হয়। বিশেষ করে সরকারের দিক থেকে ইসিকে স্পষ্ট কোনো বার্তা না দেওয়ায় নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ–অবিশ্বাস বাড়ছিল। এর পাশাপাশি কিছু দলের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনসহ কিছু বিষয় নতুন করে সামনে আনা হয়। এ বিষয়টিও সন্দেহের চোখে দেখেছে বিএনপি।
সর্বশেষ ২২ জুলাই থেকে তিন দফায় বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এর মধ্যে ২৬ জুলাই ১৪টি দল-জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। এই বৈঠক শেষে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা ক্যাটাগরিক্যালি (সুস্পষ্টভাবে) বলেছেন, তিনি আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা, তারিখ ঘোষণা করবেন। আলোচনার সবচেয়ে ফলপ্রসূ বিষয় হচ্ছে এটা। দেশে যে অরাজকতা, তার একমাত্র সমাধানের পথ নির্বাচন—এটা সরকার বুঝতে পেরেছে।"
বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়কারী মোস্তফা জামাল হায়দারের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিনক্ষণ বা নির্দিষ্ট সময়সীমার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
তবে ২৬ জুলাই ১৪টি দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং তাঁর যে বক্তব্য গণমাধ্যমে পাঠিয়েছিল, সেখানে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে কিছু না থাকলেও নির্বাচন প্রসঙ্গে একধরনের উদ্বেগ ছিল। পতিত শক্তি গন্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভন্ডুল করার অপচেষ্টা করছে উল্লেখ করে ওই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
নির্বাচনের সময়সীমা ও তারিখ ঘোষণার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা দুই–চার দিনের মধ্যে যদি নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেন, খুশিই হব। কারণ, আমাদের দাবিই তো এটা।"
তবে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের প্রথম আলোকে বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা আসলেই কী বলেছেন, সেটা আমরা স্পষ্ট করে জানি না। যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, তারপরও নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা হবে অপরিপক্বতা। কারণ, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নির্বাচনের পূর্বশর্ত। এ ছাড়া জুলাই সনদ ঘোষণার আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে জুলাইয়ের চেতনাকে অবজ্ঞা করা। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ না করে, বিচার দৃশ্যমান না করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার অবস্থা।"
আগামী চার–পাঁচ দিনের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়ে যায়, তাহলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে আপত্তি নেই বলে জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব।
আপনার মতামত লিখুন: