রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২
জামায়াতে ইসলামী

জামায়াতের জনসমুদ্র: কানায় কানায় পূর্ণ সোহরাওয়ার্দী

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ১৯, ২০২৫, ১১:৫১ এএম

জামায়াতের জনসমুদ্র: কানায় কানায় পূর্ণ সোহরাওয়ার্দী

ছবি- সংগৃহীত

আজ (১৯ জুলাই, ২০২৫) রাজধানী ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও, সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মানুষের ঢলে উদ্যান এবং এর আশপাশের এলাকা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এটি জামায়াতে ইসলামীর জন্য ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত প্রথম একক বড় সমাবেশ, যা দলটির সাংগঠনিক সক্ষমতা নতুনভাবে জানান দিচ্ছে।

সারা দেশ থেকে বাস, ট্রেন, এবং লঞ্চযোগে আগত হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করছেন। তাদের হাতে জাতীয় পতাকা ও দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা শোভা পাচ্ছে। উদ্যানের ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেক নেতাকর্মী বাইরের রাস্তাতেও অবস্থান নিয়েছেন। সকাল ১০টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের উপচে পড়া ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকরা।

জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসমাগমের দাবি করছেন এবং তাদের টার্গেট ১৫ লাখ লোকসমাগম ঘটানো। এই সমাবেশকে তারা রাজনীতির মাঠে নতুনভাবে আলোড়ন সৃষ্টির একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যখন তীব্র বিতর্ক চলছে, ঠিক তখনই জামায়াতে ইসলামী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে এমন একটি বিশাল সমাবেশ আয়োজন করল। এতদিন দলটি ঢাকার পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ময়দান সহ বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলেও, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কখনোই এককভাবে এত বড় সমাবেশ করেনি। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এই সমাবেশ তাদের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন এবং নতুন প্রজন্মের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছানোর একটি মাধ্যম।

জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান আজকের সমাবেশ থেকে মূলত দুটি বিষয়ে প্রধান দিকনির্দেশনামূলক বার্তা দেবেন বলে জানা গেছে: গণহত্যার বিচার ও সংস্কার শেষে পিআর (portional Representation) পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার ভিত্তিতে জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। এই বার্তাগুলো দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে।

প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা: জামায়াতের সমাবেশ সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দলের আমির সহ শীর্ষ নেতারা ঢাকা মহানগর সহ দেশজুড়ে ব্যাপক গণসংযোগ, প্রস্তুতি সভা, মিছিল-সমাবেশ সহ ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়েছেন। সমাবেশের জন্য ১০০ ফুট লম্বা এবং ৩৬ ফুট প্রশস্ত একটি অত্যাধুনিক মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে এলইডি মনিটর, অতিথিদের বসার সুব্যবস্থাসহ সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ, বিরাট আকৃতির ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। সমাবেশস্থলে পর্যাপ্ত ছাউনি, চিকিৎসক দল, মেডিকেল বুথ এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, দুই মহানগর সহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে কয়েক লাখ লোক অংশ নেবে। প্রায় ১০ হাজার বাস এবং কয়েক জোড়া ট্রেন রিজার্ভ করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। লঞ্চেও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ শুক্রবার (১৮ জুলাই) সমাবেশের উদ্দেশে রওনা দেন।

এই সমাবেশে বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। একই সাথে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যা সমাবেশের একটি বিশেষ দিক। সমাবেশের মূল মঞ্চে জামায়াতের জাতীয় নেতা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কর্মপরিষদ সদস্য, বিভিন্ন দলের নেতা এবং জুলাইয়ের শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। বিপুল পরিমাণ লোকের গাড়ি পার্কিং, অজু-নামাজের ব্যবস্থা এবং টয়লেট স্থাপন সহ বিভিন্ন বিষয়ে সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকেও সমাবেশকে ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর এই বিশাল জনসমাগম নিঃসন্দেহে দলটির সাংগঠনিক শক্তি এবং রাজনৈতিক সক্ষমতার একটি বড় বহিঃপ্রকাশ। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সমাবেশ থেকে আসা বার্তাগুলো দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ এবং আলোচনার জন্ম দিতে পারে। একই সাথে, শান্তিপূর্ণভাবে এমন একটি বড় সমাবেশ আয়োজন এবং এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, উভয় পক্ষের জন্য একটি বড় পরীক্ষা ছিল, যেখানে উভয় পক্ষই ইতিবাচকভাবে কাজ করছে বলে প্রতীয়মান হয়। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, এই সমাবেশ থেকে কী বার্তা আসে এবং তার প্রভাব কী হয়।