জুলাই ২১, ২০২৫, ১১:০৪ এএম
পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে অসাধারণ জয় পাওয়ায় বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এক তথ্য বিবরণীতে রোববার এই অভিনন্দন বার্তা জানানো হয়। এই জয়ে টাইগারদের আত্মবিশ্বাস যেমন তুঙ্গে, তেমনি দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝেও নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। উপদেষ্টার অভিনন্দন কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি দলের প্রতি রাষ্ট্রের সমর্থন এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রোববার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯.৩ ওভারে মাত্র ১১০ রানে অলআউট হয়। এই লো-স্কোরিং ম্যাচে বাংলাদেশের বোলাররা দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স দেখিয়েছেন। বিশেষ করে পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে মাত্র ৬ রান খরচ করে ২ উইকেট শিকার করে রেকর্ড গড়েন, যা টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিং ফিগারগুলোর একটি। এছাড়া তাসকিন আহমেদ ৩.৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন। পাকিস্তানের পক্ষে ওপেনার ফখর জামান সর্বোচ্চ ৪৪ রান করলেও, দলের বাকি ব্যাটসম্যানরা সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি।
১১০ রানের মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ শুরুতেই কিছুটা চাপে পড়ে যায়। ২.২ ওভারে তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাসের উইকেট হারিয়ে দল যখন ২৯ রানে, তখন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকেছিল। তবে, সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন তরুণ ব্যাটসম্যান পারভেজ হোসেন ইমন এবং তাওহিদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেটে এই জুটি ৬২ বলে ৭৩ রানের অবিচ্ছিন্ন একটি রেকর্ড জুটি গড়েন, যা বাংলাদেশের ইনিংসে মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছে। তাওহিদ হৃদয় ৩৭ বলে ৩৬ রান করে আউট হলেও, পারভেজ হোসেন ইমন নিজের দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করেন। তিনি ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৩৯ বলে ৩টি চার এবং ৫টি ছক্কার সাহায্যে ৫৬ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলেন এবং ম্যাচ সেরা হন। জাকের আলি অনিককে সাথে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ১৮ বলে ৩২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ২৭ বল আগেই দলের জয় নিশ্চিত করেন ইমন।
এই জয় শুধুমাত্র একটি ম্যাচের ফলাফল নয়, বরং এটি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি পারফর্ম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল। পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে এমন দাপুটে জয়, বিশেষ করে বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং তরুণ ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বশীল পারফর্ম্যান্স ভবিষ্যৎ সিরিজের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে। মোস্তাফিজুর রহমানের ফর্মে ফেরা এবং তাসকিনের গতি ও সুইং ব্যাটসম্যানদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, পারভেজ হোসেন ইমনের মতো তরুণ ওপেনারের ম্যাচ জেতানো ইনিংস নিঃসন্দেহে নির্বাচকদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে। এটি প্রমাণ করে যে, সঠিক সুযোগ পেলে তরুণ ক্রিকেটাররাও আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম। এই জয়ের কৌশলগত দিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ দল আগ্রাসী বোলিংয়ের মাধ্যমে শুরুতেই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলেছে এবং পরে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে লক্ষ্য পূরণ করেছে। এটি এক ধরনের ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’ পারফর্ম্যান্স ছিল, যা সচরাচর দেখা যায় না।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার অভিনন্দন বার্তায় খেলোয়াড়দের পাশাপাশি কোচ ও বোর্ড সংশ্লিষ্ট সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, সিরিজের বাকি ম্যাচগুলোতেও এই জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে। এই ধরনের উচ্চ পর্যায়ের সমর্থন দলের মনোবল বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই জয় জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রতি জনসাধারণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে এবং আসন্ন আন্তর্জাতিক সিরিজগুলোর জন্য খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এই জয় একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়াবে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এই জয় বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি কেবল একটি সিরিজ জয় নয়, বরং দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। মোস্তাফিজ, তাসকিন এবং ইমনের মতো খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স যেমন উজ্জ্বল ছিল, তেমনি পুরো দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল এই জয়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আগামী দিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে বলে বিশ্বাস করা যায়।
আপনার মতামত লিখুন: