জুলাই ৩১, ২০২৫, ০৯:৫৮ পিএম
অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশে একটি সাধারণ ঘটনা। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এমন কাজ করার প্রবণতা দেখা যায়। ময়মনসিংহে একটি মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক দীর্ঘকাল ধরে এমন একটি অবৈধ স্থাপনা হিসেবে পরিচালিত হচ্ছিল। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসন এই ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায়, এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার নিয়ন্ত্রণে থাকা এই স্থাপনাটি উচ্ছেদ করা হয়েছে, যা প্রশাসনের কঠোর মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়।
ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের অভ্যন্তরে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমানের নিয়ন্ত্রণে থাকা মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্ক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অংশ হিসেবে এই যৌথ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, বন বিভাগের লোকজনও এতে অংশ নেন। একইসঙ্গে উচ্ছেদ করা হয় জয়নুল উদ্যান এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটও।
তবে অভিযানের শুরুতেই মিনি চিড়িয়াখানায় থাকা প্রাণীগুলোকে বন বিভাগের হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান ময়মনসিংহ রেঞ্জের অফিসার রিদুয়ানুল হক। তিনি বলেন, “এই চিড়িয়াখানাটি ছিল অবৈধ। জেলা প্রশাসন এটি উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের কাছে চিঠি পাঠায় এখানে থাকা বন্যপ্রাণীগুলো সরিয়ে নিতে। এখানে ৫টি হরিণ, দুটি ময়ুর, একটি গাধা, কিছু ঘুঘু পাখি, দুটি ইমু পাখি পাওয়া গেছে। এই প্রাণীগুলো সরিয়ে নিয়ে গাজীপুর সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা হবে।”
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, জয়নুল আবেদিন উদ্যানে মিনি চিড়িয়াখানা ও চিড়িয়াখানা-সংলগ্ন শিশুপার্কের ভূমি ইজারার চুক্তিপত্র বাতিল করে গত ২৬ জুন ইজারাগ্রহীতা মো. সেলিম মিয়াকে চিঠি দেয় সিটি করপোরেশন। চিঠি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে সেখানকার অবকাঠামো ও পশুপাখি নিজ হেফাজতে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। ইজারাগ্রহীতা সেলিম মিয়া হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমানের শ্যালক। চলতি বছরের ৮ মার্চ ওই আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। সেলিমের নামে এটি লিজ নেওয়া হলেও মূলত এর নিয়ন্ত্রক ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৩০ জুন তৎকালীন পৌরসভা মিনি চিড়িয়াখানাটি ১০ বছরের জন্য ইজারা দেয়। ২০২৪ সালের ৩০ জুন ইজারার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ৬ লাখ টাকায় চিড়িয়াখানাটির ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও জমা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। চিড়িয়াখানাটির পাশের জমিটি ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে মাসিক ১ হাজার টাকা ভাড়ায় চুক্তি সম্পাদন করা হয়। এটিও ইজারা দেওয়া হয় সেলিম এন্টারপ্রাইজকে। দুই শতক জমি ১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও চুক্তিপত্রে শিশুপার্কের কথা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয় বলে সিটি করপোরেশনের চুক্তি বাতিলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে নিয়মিত মাসিক ভাড়া না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল, যা চুক্তিপত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন মর্মে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। ওই অবস্থায় ইজারা বাতিল করে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্ক অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় সিটি করপোরেশন।
তবে চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপক মো. কামাল হোসেন দাবি করে বলেন, “আমাদের কাগজপত্র আছে, তা দেখানো হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে এটি অবৈধ।” এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমনা আল মজীদ বলেন, “চুক্তির শর্ত ভঙ্গ, অর্থ পরিশোধ না করায় মিনি চিড়িয়াখানা ও পাশের জমিতে করা শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল করে উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ হওয়া স্থানে শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য লাইব্রেরি, খেলনা ও কিছু রাইড থাকবে এবং বাগান করে দেওয়া হবে। শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করবে।”
আপনার মতামত লিখুন: