শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

‘চারডে ভাত পাইলে আর ভিক্ষা করতাম না’

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ৩১, ২০২৫, ১০:০৬ পিএম

‘চারডে ভাত পাইলে আর ভিক্ষা করতাম না’

ছবি- সংগৃহীত

সমাজে বয়স্ক মানুষের প্রতি অবহেলা ও দারিদ্র্য একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে গ্রামের দিকে এমন অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রয়েছেন, যাদের শেষ জীবনে কোনো সহায়-সম্বল থাকে না এবং সন্তানদের অবহেলায় তাদের জীবন কাটে সীমাহীন কষ্টে। শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় দুই বৃদ্ধা তারা বেগম ও জহুরা বেগমের করুণ দশা তেমনই এক সামাজিক প্রতিচ্ছবি। তাদের অসহায়ত্ব এবং বেঁচে থাকার জন্য নিত্যদিনের সংগ্রাম সমাজে মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরে।

‘একদিন ভিক্ষা না করলে খাওন জোটে না। এখন আর আগের মতো হাঁটতে পারি না, খুব কষ্ট হয়। কেউ যদি চারডে ভাত তিন বেলা দিত, তাইলে আর গাঁও ঘুইরা ভিক্ষা করতাম না। শরীরে অনেক অসুখ, তাও কষ্ট কইরা চলাফেরা করি।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের গেরামারা গ্রামের ৯৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা তারা বেগম।

তিনি বলেন, ‘হাতে কী অসুখ হয়েছে তাও কবার পাই না, শুধু চুলকাই। ঘরে বিদ্যুৎ নেই, অন্ধকারে গরমের মধ্যে দিন পার করতে হয়।’

তারা বেগম বলেন, ‘আগে আমার বাড়ির সামনে সব জমি আমাগো ছিল। কত ধান আবাদ হইতো। এহন আমার স্বামীও নাই, জমিও নাই। কইডা ভাতের জন্য ভিক্ষা করতে হয়। চার ছেলেমেয়ের কেউ দেহে না। ঠিক মতো কতা কইতেও পারি না, কানেও শুনি না।’

তারই পাশের বাড়ির আরেক বৃদ্ধা জহুরা বেগমের (৯০) কণ্ঠেও একই হাহাকার। তিনি বলেন, ‘কেউ খোঁজ নেয় না, নাই-বা খুঁজলো। আল্লাহ যেই দিন নিবে, ওইদিন এই কষ্ট শেষ হইবো। তাও চাই, মরার আগে দুই বেলা পেট ভরে খাইতে পারি। এখন তো ভিক্ষা করতে গেলে খুব কষ্ট হয়, পা খুব ব্যথা করে। দুই ছেলে দুই মেয়ে কেও আমারে দেহে না। ঘরের মধ্যে কোনো রকমে দিন পার করি। এখন আর শরীর চলে না। কষ্ট করে ভিক্ষা করে দিন যায়। চোখে দেহি না, কানে শুনি না, মুখ দিয়ে ঠিক মতো কতাও বাইর হয় না।’

দুই বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তারা বেগম ও জহুরা বেগম কারও কাছে মা, কারও কাছে দাদি। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী শুধু ক্ষুধা আর কষ্ট। পেটের দায়ে প্রতিদিন ভর দুপুরে বের হন তারা। কারও দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন নিঃশব্দে, কারও উঠানে বসে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কেউ এক মুঠো চাল দেন, কেউ কিছুই না বলে ফিরে যান। তবুও অভিমান নেই, কারণ তারা জানেন ক্ষুধার চেয়ে বড় কিছু নেই এই বয়সে।

দুই বৃদ্ধা জানান, তারা সরকারিভাবে মাসে ৬০০ টাকা করে বয়স্ক ভাতা পান। এই টাকা দিয়ে চাল কিনবেন, না ওষুধ সেটাই ভাবেন। হাসপাতালে গেলে ওষুধ কেনার জন্য বাইরে পাঠানো হয়, কিন্তু সেই ওষুধ কেনার টাকা কোথা থেকে আসবে? শেষ জীবনে কষ্ট যেন কম হয়, শেষ জীবনে ভালো একটা ব্যবস্থা চান, যাতে করে আর ভিক্ষা না করতে হয়।

শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের আহামেদ বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আমার হোয়াটসঅ্যাপে তাদের তথ্য দিন। আমরা খোঁজখবর নিয়ে আমাদের জায়গা থেকে তাদের জন্য সার্বিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করবো।”