জুলাই ২২, ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ২৪ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩১ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মুখে এ সিদ্ধান্ত নিল সরকার। এর আগে, মঙ্গলবার ২২ জুলাইয়ের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত সকল দাবি যৌক্তিক হিসেবে মেনে নিয়েছে এবং সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ড. সি আর আবরার মঙ্গলবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ২৪ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো, যখন গত সোমবারের (২১ জুলাই) বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। গতকাল (২১ জুলাই) সোমবার রাতেও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার ফেসবুক পোস্টে ২২ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের তথ্য জানিয়েছিলেন। পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রথম দফায় স্থগিতাদেশের পর এবার ২৪ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকারের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিমান বিধ্বস্তের এই মর্মান্তিক ঘটনার পর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবিকে যৌক্তিক বলে মনে করছে। মঙ্গলবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে সরকারের দুই উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:
-
নিহত ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ: শিক্ষার্থীদের মূল দাবি ছিল বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের নাম-ঠিকানা এবং আহতদের নির্ভুল তালিকা দ্রুত প্রকাশ করা।
-
শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণের জন্য ক্ষমা: আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, ঘটনার সময় কিছু সেনাসদস্য শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন, যার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
-
ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন: নিহত ও আহতদের পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।
-
ঝুঁকিপূর্ণ বিমান বাতিল ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতি সংস্কার: ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল করা এবং বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতির সংস্কার করা।
-
জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান চলাচল বন্ধ: জনবসতিপূর্ণ এলাকার উপর দিয়ে প্রশিক্ষণ বিমান না চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
আলোচনা শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, মাইলস্টোন স্কুলে একটি তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যেখানে নিহত ও আহতের হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, নিহত ও আহত পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সাপোর্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, আসিফ নজরুল বলেন, জনগণের ভিড় নিয়ন্ত্রণের সময় কয়েকজন সেনাসদস্য কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর মারধরের অভিযোগের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেনা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। পাশাপাশি, জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান না চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিমানবাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩১ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় মঙ্গলবার একদিনের জন্য জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়। তবে, প্রথমে শোকের মধ্যেই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। জনগণের প্রবল চাপের মুখে মধ্যরাতে ২২ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা আসে। এরপর মঙ্গলবার সকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ওই দিনের সব পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। এই দফায় ২৪ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমনে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন: