সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আলী হুসেনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এটি প্রক্টরের এখতিয়ারভুক্ত সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ এই ঘটনা ক্যাম্পাসে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
ডাকসু নির্বাচনে ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক বি এম ফাহমিদা আলমকে উদ্দেশ্য করে আলী হুসেন ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন এবং গণধর্ষণের হুমকি দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ঢাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সুপারিশের আলোকেই আলী হুসেনকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দ্রুত পদক্ষেপকে অনেক মহল থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে, কারণ এটি ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কঠোর মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই ঘটনা কেবল একজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়, বরং বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নৈতিকতার সংকটকে তুলে ধরেছে। একসময় ক্যাম্পাস রাজনীতি ছিল আদর্শ ও মেধার লড়াই, কিন্তু বর্তমানে এটি সহিংসতা, ঘৃণা এবং নারী-বিদ্বেষের মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। ঢাবি প্রশাসনের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে শিক্ষার্থীদের বিরত রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে, আলী হুসেনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিষয়ক কমিটিতেও পাঠানো হয়েছে, যা তার বিরুদ্ধে আরও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পথ খুলে দিতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও দায়িত্বশীল আচরণের বিষয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি, যাতে তারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করতে শেখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কঠোর পদক্ষেপ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।