সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ১২:৫০ এএম
রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রীদের নিয়ে ছাত্রদলের এক নেতার অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। গত বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ১১টার দিকে জুলাই-৩৬ হলের সামনে থেকে হলের ছাত্রীরা এ বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা 'ইভটিজারের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও', 'নারীদের বুলিং করে, প্রশাসন কী করে?', এবং 'ইভটিজারের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না'—এমন বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
বিক্ষোভ থেকে ছাত্রীরা তিনটি সুনির্দিষ্ট দাবি উত্থাপন করেছেন। তাদের দাবিগুলো হলো: অশালীন মন্তব্যকারী আনিসুর রহমান মিলনের স্থায়ী বহিষ্কার, ছাত্রদলের পদ থেকে তার মনোনয়নপত্র বাতিল ও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া; ক্যাম্পাসে একটি সাইবার বুলিং সেল গঠন করা; এবং ফেসবুকে যাবতীয় অশালীন মন্তব্যকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
অভিযুক্ত আনিসুর রহমান মিলন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হল শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তার পদ স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'বিষয়টির সত্যতা যাচাই না হওয়া পর্যন্ত সংগঠন আনিসুর রহমানের পদ স্থগিত করেছে। সঠিক তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।' এই কমিটিতে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাকিলুর রহমান এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, 'প্রাথমিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি দাবি করেছেন যে তার ফেসবুক আইডির নিয়ন্ত্রণ তার কাছে ছিল না। সাংগঠনিক দায়িত্বে থেকে এমন কাজ তিনি করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। যদি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, তাকে আজীবনের জন্য ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তার শাস্তি দেওয়ার জন্য ছাত্রদল থেকে সুপারিশ করা হবে।'
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে গত সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে। সে সময় হলে ফিরতে বিলম্ব করায় জুলাই-৩৬ হলের ৯১ জন ছাত্রীকে প্রাধ্যক্ষের অফিসে তলব করে একটি নোটিশ দেয় হল কর্তৃপক্ষ। ওই নোটিশের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরদিন মঙ্গলবার নোটিশটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি ফটোকার্ডের মন্তব্য সেকশনে আনিসুর রহমান মিলনের আইডি থেকে ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে একটি অত্যন্ত অশালীন মন্তব্য করা হয়, যা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। এই আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদেই ছাত্রীরা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান জানিয়েছেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। প্রক্টরিয়াল বডি থেকে ওই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।'