আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০৯:৪৫ এএম
দীর্ঘ তিন বছরের উত্তেজনা ও কূটনৈতিক স্থবিরতার পর দক্ষিণ এশিয়ার দুই বৃহৎ শক্তি ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। সোমবার (১৮ আগস্ট) নয়াদিল্লিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও ওয়াং ইয়ের বৈঠকের পর এই প্রশ্ন সামনে এসেছে—দুটি দেশ কি এবার বৈরিতা পেছনে ফেলে বন্ধুত্বের পথে হাঁটতে চলেছে? এই সফরকে অনেকে দুই দেশের সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখছেন।
২০১৯ সালের পর থেকে ভারত-চীন সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। লাদাখ সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘাত এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে বিরোধের কারণে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনার পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। করোনা মহামারির কারণে কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ও থেমে যায়। ওয়াং ইয়ের এই সফরকে সেই স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কনীতি ভারত ও চীন উভয় দেশের অর্থনীতিতে বড় চাপ তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই অর্থনৈতিক চাপই দুটি দেশকে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব কমাতে বাধ্য করছে। ওয়াং ই নিজেই তার বক্তব্যে বলেন, "হাতি ও ড্রাগনকে একসঙ্গে নাচানোই সঠিক পথ।" তার এই মন্তব্য স্পষ্ট করে যে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অপরিহার্য।
তবে সম্পর্কের পূর্ণ উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে এখনো পাকিস্তান ইস্যুটি রয়ে গেছে। চীন পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং সন্ত্রাসবিরোধী ইস্যুতে ইসলামাবাদকে সমর্থন দিয়ে আসছে, যা ভারতের কাছে একটি বড় নিরাপত্তা হুমকি। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান ইস্যুতে কোনো সমাধান না হলে ভারত-চীন সম্পর্কের পূর্ণ উন্নতি কঠিন হবে।
যদিও সীমান্ত ও দ্বিপাক্ষিক বিরোধ সত্ত্বেও ব্রিকস, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে দুটি দেশের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এই সহযোগিতা যদি আরও শক্তিশালী হয়, তবে তা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিতেও বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও দ্রুত বর্ধনশীল এই দুটি দেশ যদি নিজেদের মধ্যকার অবিশ্বাস কাটিয়ে উঠতে পারে, তবে তা এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি নতুন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করবে। ওয়াং ইয়ের এই সফরকে তাই অনেকেই ভারত-চীন সম্পর্কের একটি 'টার্নিং পয়েন্ট' হিসেবে দেখছেন।