মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২

কেন ধীরগতির ট্রেনে ভ্রমণ করেন কিম, কী আছে এতে?

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫, ১০:০৯ এএম

কেন ধীরগতির ট্রেনে ভ্রমণ করেন কিম, কী আছে এতে?

ছবি - সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন সম্প্রতি তার বিশেষায়িত সবুজ ট্রেনে করে পিয়ংইয়ং থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন। বহু দশক ধরে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতারা এই ধীরগতির ট্রেনকেই তাদের প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। দেশের সাধারণ যাত্রীবাহী বিমানের চেয়ে এই বুলেটপ্রুফ ট্রেনগুলো অনেক বেশি নিরাপদ এবং আরামদায়ক। এর মধ্যে থাকে একটি বৃহৎ সফরসঙ্গী দল, কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা, বিলাসবহুল খাবার এবং অন্যান্য সব অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বৈঠকের পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়ার জন্যও এই ট্রেন এক আদর্শ পরিবেশ। ট্রেনের ভেতরে আসলে কী আছে তা নিয়ে কৌতূহল মানুষের মধ্যে ব্যাপক। দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ আহন বিয়ং-মিনের মতে, নিরাপত্তার স্বার্থে উত্তর কোরিয়ার নেতারা একাধিক ট্রেন ব্যবহার করে থাকেন। প্রতিটি ট্রেনে সাধারণত ১০ থেকে ১৫টি বগি থাকে। এর মধ্যে কিছু বগি একান্তভাবে কিমের জন্য সংরক্ষিত, যেখানে শয়নকক্ষও রয়েছে। অন্যান্য বগিতে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ও চিকিৎসক দল অবস্থান করে।

এছাড়াও, ট্রেনের ভেতরে রয়েছে কিমের ব্যক্তিগত অফিস, যোগাযোগ ব্যবস্থা, একটি সুসজ্জিত রেস্টুরেন্ট এবং এমনকি দুটি সাঁজোয়া মার্সিডিজ গাড়ি বহনের জন্য বিশেষ বগি। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, কিম সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে সবুজ বগির বাইরে সিগারেট বিরতি নিচ্ছেন। বগির গায়ে খোদাই করা রয়েছে সোনালি প্রতীক ও অলঙ্করণ। আরেকটি ছবিতে কিমকে একটি কাঠের দেয়ালঘেরা অফিস কক্ষে বসে থাকতে দেখা যায়, যার সামনে রয়েছে উত্তর কোরিয়ার পতাকা এবং সোনালি প্রতীক। তার ডেস্কে একটি সোনালি চিহ্নযুক্ত ল্যাপটপ, কয়েকটি টেলিফোন, সিগারেটের বক্স এবং স্বচ্ছ পানীয় ভর্তি বোতল রাখা ছিল। জানালাগুলো নীল-সোনালি পর্দায় সজ্জিত।

২০১৮ সালে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রকাশিত এক ভিডিওতে কিমকে একটি প্রশস্ত বগিতে গোলাপি সোফায় ঘেরা পরিবেশে শীর্ষ চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা যায়। ২০২০ সালে আবার এক ঘূর্ণিঝড়-বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার সময় তার ট্রেনের ভেতরের আরও কিছু চিত্র সামনে আসে, যেখানে ফুলের আকৃতির আলোকসজ্জা এবং জেব্রা নকশার কাপড়ের চেয়ার দেখা যায়। রাশিয়ার সাবেক কর্মকর্তা কনস্তান্তিন পুলিকভস্কি তার ২০০২ সালের বই ‘অরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’-এ কিম জং ইলের (কিম জং উনের বাবা) মস্কো সফরের বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ট্রেনে ফ্রান্স থেকে আনা বোর্দো ও বোঝোলাই ওয়াইন এবং এমনকি জীবন্ত লবস্টারও পরিবেশন করা হতো। এই বিলাসবহুল ট্রেনের ভ্রমণশৈলী বিশ্ব জুড়ে সবসময়ই আলোচনার জন্ম দেয়।