সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং-উন বিশেষ সাঁজোয়া ট্রেনে চড়ে চীন সফরে গেছেন। এটি তার ঐতিহ্যবাহী ‘সাঁজোয়া ট্রেন কূটনীতি’র অংশ। বেইজিংয়ে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিশ্বের ২৬টি দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একটি বিশেষ বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক সমাবেশে অংশ নেবেন। নিরাপত্তার কারণে কিম আকাশপথের পরিবর্তে প্রায় ২০ ঘণ্টার এই দীর্ঘ ট্রেনযাত্রা বেছে নিয়েছেন।
কোরিয়ান হেরাল্ডের এক প্রতিবেদন অনুসারে, কিম সোমবার দুপুরে পিয়ংইয়ং থেকে তার ব্যক্তিগত ট্রেন 'তেয়াং-হো'তে যাত্রা শুরু করেন। অলিভ-সবুজ রঙের এবং হলুদ ডোরাকাটা এই ট্রেনটি অত্যন্ত ভারী সাঁজোয়াযুক্ত এবং মঙ্গলবার চীন সীমান্ত অতিক্রম করে বেইজিং পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিমের এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এখানে তিনি এমন ২৬ জন নেতার সঙ্গে একই মঞ্চে থাকবেন, যাদের মধ্যে রাশিয়া, ইরান ও মিয়ানমারের মতো নিষেধাজ্ঞাগ্রস্ত দেশও রয়েছে। তবে কোনো পশ্চিমা দেশের নেতা এই সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন না। কিম জং-উন, শি জিনপিং ও ভ্লাদিমির পুতিন একসঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করবেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, কিমের ট্রেনটি বুলেটপ্রুফ কাচ, শক্তিশালী বর্ম, রাডার ফাঁকি দেওয়ার বিশেষ জাল এবং অনবোর্ড মর্টার দিয়ে সজ্জিত। এ কারণে এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই বিশেষ ট্রেনটির নাম 'তেয়াং-হো', যার অর্থ 'সূর্য'। এটি উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল-সাংকে প্রতীকীভাবে স্মরণ করে রাখা হয়েছে।
ক্ষমতায় আসার পর কিম জং-উন এই নিয়ে নবম বারের মতো বিদেশ সফরে বের হলেন। এর আগে আটটি সফরের মধ্যে পাঁচবারই তিনি এই বিশেষ ট্রেন ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বেইজিং সফর, ২০১৯ সালে হ্যানয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক, একই বছর রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তকে পুতিনের সঙ্গে প্রথম বৈঠক এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আবারও পুতিনের সঙ্গে আমুর অঞ্চলে বৈঠক—সব ক্ষেত্রেই তিনি এই ট্রেন ব্যবহার করেছেন। তবে তিনবার তিনি আকাশপথ ব্যবহার করেছেন, যার মধ্যে একবার চীনের বিশেষ বিমানে চড়ে সিঙ্গাপুরে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের জন্য গিয়েছিলেন। কিমের এই 'সাঁজোয়া ট্রেন কূটনীতি' আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার নিজস্ব নিরাপত্তা ও স্বাতন্ত্র্যের পরিচায়ক হিসেবে পরিচিত।