সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন নতুন করে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘সিদ্ধান্তমূলক পর্যায়ে’ পৌঁছানোর ঘোষণার পর এই হামলা আরও জোরদার হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) একদিনেই ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১০৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই বর্বরতা এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন গাজার প্রায় ১০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত প্রধান নগরকেন্দ্রটির (গাজা সিটি) নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে ইসরাইল।
আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজা জুড়ে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় বহু বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বিশেষ করে, আল-সাবরা এলাকায় ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। সূত্রের খবর, নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩২ জন ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে সাতজন শিশুও ছিল, যারা দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নিকটবর্তী আল-মাওয়াসি এলাকায় পানির লাইনে অপেক্ষারত অবস্থায় ইসরাইলি ড্রোন হামলায় প্রাণ হারায়। এই ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক মূল্যবোধের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
এই পরিস্থিতি কেবল বোমা হামলা ও গোলাবর্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। গাজায় খাদ্য ও মানবিক সহায়তার মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে, যা দুর্ভিক্ষের জন্ম দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা অন্তত ১৩ জন। এতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধাজনিত কারণে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬১। এর মধ্যে ২২ আগস্ট দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে ৮৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক মাসে গাজায় প্রবেশ করা মানবিক সহায়তার ট্রাকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ১৫ শতাংশ। জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়ন সংস্থার (আইপিসি) দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সত্ত্বেও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই সত্য অস্বীকার করে এটিকে 'পুরোপুরি মিথ্যা' বলে দাবি করেছেন।
গাজায় মানবিক সংকটের ভয়াবহতা বর্ণনা করে আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খুদারি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা এখন গাজা সিটিতে যেন খাঁচার ভেতরে বন্দি। তারা যতটা সম্ভব বিমান হামলা থেকে বাঁচতে চেষ্টা করছে। কিন্তু যেখানেই যাচ্ছে, হামলা তাদের অনুসরণ করছে। খাদ্য ও সাহায্যের অভাবে তারা মারা যাচ্ছে, কারণ তারা ন্যূনতম বেঁচে থাকার উপকরণও পাচ্ছে না।’ এই বক্তব্য গাজার মানুষের করুণ পরিস্থিতি তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও ইসরায়েল তাদের আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আরও কঠোর চাপ না এলে এই মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।