সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

ডোপ টেস্টের কিট সংকটে দেশজুড়ে ভোগান্তি

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২১, ২০২৫, ১০:৫৫ এএম

ডোপ টেস্টের কিট সংকটে দেশজুড়ে ভোগান্তি

ছবি- সংগৃহীত

গত সপ্তাহে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা মো. আতিকুল ইসলামকে ডোপ টেস্টের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নির্দেশনা দেওয়া হয়। তিনি প্রথমে জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) যান। সেখানে ল্যাবের সামনে সুস্পষ্ট নোটিশে তিনি দেখতে পান, "কিট শেষ হওয়ায় ডোপ টেস্ট বন্ধ।" নিটোরের ল্যাব সংশ্লিষ্টরাও একই তথ্য নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে আতিকুল বিআরটিএ-এর ফর্মে উল্লিখিত আরেকটি প্রতিষ্ঠান, আগারগাঁওয়ের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার’-এ গেলে জানতে পারেন, কেবলমাত্র ঢাকা জেলার জাতীয় পরিচয়পত্রধারী বাসিন্দাদেরই সেখানে ডোপ টেস্ট করা হয়।

মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, নিরুপায় আতিকুল এরপর মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে যান। সেখানে তাকে জানানো হয়, কিট সংকটের কারণে দৈনিক মাত্র ৫ থেকে ৭ জনের টেস্ট করা সম্ভব হচ্ছে। সিরিয়াল দিলে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বরের আগে টেস্ট করানো সম্ভব নয়। হাসপাতালটির ল্যাব টেকনোলজিস্টরা তাকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। সেখানে গেলে তিনি জানতে পারেন, দৈনিক ৩০ জনের বেশি সিরিয়াল নেওয়া হয় না এবং দ্রুত টেস্ট করানোও সম্ভব নয়। সবশেষে তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় মাদক নিরাময় হাসপাতালে গিয়ে তিনি ডোপ টেস্টের জন্য নমুনা জমা দিতে সক্ষম হন। আতিকুলের মতো অসংখ্য মানুষ এই একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও একই ধরনের কিট সংকটের খবর পাওয়া গেছে, যা সামগ্রিকভাবে একটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

ডোপ টেস্ট হয় এমন কয়েকটি হাসপাতালের ল্যাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সংকট কেবল ঢাকা শহরেই সীমাবদ্ধ নয়। জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও একইরকম চিত্র দেখা যাচ্ছে। বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ (ল্যাব) মো. আ. রহমান দেওয়ান বলেন, গত অর্থবছরে কেনা রিএজেন্টগুলো সর্বোচ্চ আর এক মাস চলবে। নতুন দরপত্র সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট কাটার কোনো সম্ভাবনা নেই। নিটোরের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মাহমুদ জানান, আগে দিনে ১৫০ থেকে ২০০ জনের টেস্ট হতো, কিন্তু কিটের স্টক শেষ হওয়ায় বর্তমানে টেস্ট বন্ধ। তিনি হাসপাতাল পরিচালক বরাবর চাহিদাপত্র দিয়েছেন এবং সরবরাহ পেলে পুনরায় চালু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে নিটোরের পরিচালক ডা. আবুল কেনান বলেন, রিএজেন্ট সংকট ছিল, তবে কেনা হচ্ছে। ডোপ টেস্টের কিটসহ অন্যান্য উপকরণ আসছে কিনা, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম সাহাবুদ্দিন আহামদ বলেন, কোভিডের সময় চালু হওয়া ইআরপিপি প্রজেক্টের আওতায় বেশকিছু জনবল এখানে কাজ করত, যার কারণে তখন বেশি টেস্ট হতো। প্রকল্পটি শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমান জনবল দিয়ে আগের মতো চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানোর পর শুধু ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা জেলার জাতীয় পরিচয়পত্রধারীদের টেস্টের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা সামগ্রিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে।

সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু আহসান মো. মঈনুল হোসেন জানান, যেসব হাসপাতালে ডোপ টেস্টের নির্দেশনা আছে, সেসব হাসপাতালগুলোর এমএসআর বাজেট থেকে ডোপ টেস্টের কিট ও রিএজেন্ট কেনার নিয়ম। তিনি মন্তব্য করেন, সংকট হলে দায়ভার হাসপাতাল পরিচালকের। অধিদপ্তর থেকে কিট সরবরাহ করা হয় না, কারণ হাসপাতালগুলোতে অর্থ, জনবল, ল্যাব সবকিছুই আছে। তাই টেস্ট বন্ধের কারণ সম্পর্কে হাসপাতালগুলোই ভালো বলতে পারবে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানান, ডোপ টেস্ট হলো এমন একটি মেডিকেল পরীক্ষা যা কোনো ব্যক্তি মাদকাসক্ত কিনা তা যাচাই করে। যারা নিয়মিত মাদক বা অ্যালকোহল গ্রহণ করেন, তাদের শরীরে এই নেশাজাতীয় পদার্থের উপস্থিতি ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে। এই সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি যেমন ব্যাহত হবে, তেমনি পরিবহন খাতে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে এবং মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারের চলমান প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হবে।