শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

দুঃখ প্রকাশ করল বাংলাদেশ পুলিশ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৫, ২০২৫, ০৮:০৪ পিএম

দুঃখ প্রকাশ করল বাংলাদেশ পুলিশ

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় একটি মোবাইল ছিনতাই ও পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন আহমাদ ওয়াদুদ। তার এই পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশ তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যের অসদাচরণের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, আহমাদ ওয়াদুদের ফেসবুক স্ট্যাটাস 'মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের সঙ্গে এক ঘণ্টা' তাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ভুক্তভোগীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে বর্ণিত অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট চারজন পুলিশ সদস্যকে (এসআই জসিম, এসআই আনারুল, কনস্টেবল নুরুন্নবী ও কনস্টেবল মাজেদুল ইসলাম) ইতিমধ্যে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে, ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয়েছে এবং তিনজন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এর আগে মোবাইল মালিক আহমাদ ওয়াদুদ ছিনতাইয়ের ঘটনা এবং পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি বিস্তারিত পোস্ট দেন। তার পোস্টে তিনি লেখেন:

"আজ (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরে আমার সঙ্গে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা আমার একটি মোবাইল ফোন এবং কিছু টাকা-পয়সাসহ মানিব্যাগ নিয়ে যায়। আমাকে চাপাতি দিয়ে কিছু আঘাত করে। সৌভাগ্যবশত আঘাত গুরুতর নয়। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী ছিলেন। একটু দূরে থাকায় তিনি নিরাপদ ছিলেন।"

তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে মোহাম্মদপুর থানার অবস্থান মাত্র ৩ মিনিটের হাঁটার দূরত্বে। তিনি এবং তার স্ত্রী ঘটনার ৫ মিনিটের মধ্যে থানায় যান। সোজা ডিউটি অফিসারের রুমে গিয়ে তারা জানান, ৫ মিনিট আগে তিন রাস্তার মোড়ে তাদের সঙ্গে একটি ছিনতাই হয়েছে।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী, ডিউটি অফিসার এসআই জসিম তাদের অপেক্ষা করতে বলেন। পাশে সাদা পোশাকে থাকা একজন পুলিশ সদস্য উগ্রভাবে তাকে শার্টের বোতাম লাগাতে বলেন, যা ছিনতাইকারীদের আঘাতের সময় খুলে গিয়েছিল। ভুক্তভোগী ক্ষমা চেয়ে বোতাম লাগালেও ওই অফিসার তাকে সবগুলো বোতাম লাগাতে নির্দেশ দেন।

আহমাদ ওয়াদুদ আরও লেখেন, তাদের অভিযোগ লেখার লোক নেই বলে জানানো হয়। তিনি নিজে অভিযোগ লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে কয়েক মিনিট পর একটি সাদা কাগজ দেওয়া হয়, কিন্তু কলম দিতে অস্বীকার করা হয়। পরে তার স্ত্রী নিজের ব্যাগ থেকে কলম দেন। অভিযোগ লেখার পর ডিউটি অফিসার কোনো কপি না দিয়ে শুধু এএসআই আনারুলের নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলেন, কারণ তিনি 'হাউজিংয়ে ব্যস্ত' ছিলেন।

ভুক্তভোগী তখন বিনীতভাবে অনুরোধ করেন যে, এখনই ঘটনাস্থলে গেলে ছিনতাইকারীদের পাওয়া যেতে পারে এবং কেউ যেন তাদের সঙ্গে যায়। এসআই জসিম প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বলেন, "এটা সম্ভব নয়। ওই এলাকায় ইনি ছাড়া আর কেউ যেতে পারবে না। এটা তার এলাকা। আপনি এখান থেকে এখন চলে যান। ওখানে গিয়ে ছিনতাইকারীদের পাবেন না।" এসআই জসিম আরও বলেন, "আপনার কমন সেন্স নাই? ছিনতাইকারী আপনার-আমার জন্য বসে থাকবে নাকি?"

এরপর আহমাদ ওয়াদুদ ওসি সাহেবের রুমে যান। ওসি ইফতেখার হাসান তাকে বলেন, "আমি ওসি হয়েও এই কম দামি ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই!" ভুক্তভোগী কোনো উত্তর না দিয়ে তাকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন। ওসি পূর্বোক্ত এএসআই আনারুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে বাসস্ট্যান্ড মোড়ে অপেক্ষা করতে বলেন।

ভুক্তভোগী বাসস্ট্যান্ডসহ মোট তিনটি পয়েন্ট ঘুরে এএসআই আনারুলের সঙ্গে দেখা করেন। তার সঙ্গে আরও সাত-আটজন পুলিশ সদস্য ছিল। আনারুল সাহেব তার কথা শুনে ঘটনাস্থলে যেতে রাজি হন। ততক্ষণে প্রায় ৪০ মিনিট পার হয়ে গেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে আহমাদ ওয়াদুদ ওই ছিনতাইকারীদের সেখানেই বসে থাকতে দেখেন। তিনি দূর থেকে তাদের দেখিয়ে দিলেও এএসআই আনারুল সেখানে না গিয়ে একটু দূরে অন্য একটি জায়গায় গিয়ে কিছু লোকের সঙ্গে কথোপকথন করেন। মিনিটদুয়েক পর তিনি ফিরে এলে ভুক্তভোগী এএসআই আনারুলকে আবার ওই সন্ত্রাসীদের দেখিয়ে দেন। কিন্তু আনারুল সেখানে না গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সন্ত্রাসীরাও পুলিশসহ ভুক্তভোগীকে দেখে আস্তে আস্তে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে থাকে।

আজ দুপুরে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান গণমাধ্যমকে জানান, সন্দেহজনকভাবে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।