আগস্ট ২৩, ২০২৫, ০৫:১৯ পিএম
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এক আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী ও তার পরিবারকে 'অবৈধ অনুপ্রবেশকারী' হিসেবে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বাসিন্দা এই নারী, সোনালি বিবি বর্তমানে তার স্বামী দানিশ শেখ এবং আট বছরের ছেলের সঙ্গে বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি। তাদের 'অবৈধ অনুপ্রবেশকারী' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যদিও তাদের কাছে ভারতীয় পরিচয়পত্র ছিল। এই ঘটনাটি ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
সোনালি বিবি দিল্লিতে প্রায় দুই দশক ধরে শ্রমিকের কাজ করতেন। গত ২৬ জুন দিল্লি পুলিশ তাকে ও তার পরিবারকে আটক করে। একই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের আরেক নারী সুইটি বিবি এবং তার দুই নাবালক ছেলেকেও আটক করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়। পরে তারা প্রথমে ঢাকায় এবং এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আশ্রয় নেন। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে এবং আদালত তাদের কারাগারে পাঠায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, তারা আসাম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে 'অবৈধ অনুপ্রবেশের' মামলায় চার্জ গঠন করা হয়েছে। তবে নারী ও শিশু থাকায়, পুলিশ মানবিকতার সঙ্গে বিষয়টি সামলাচ্ছে।
এই ঘটনায় ভারতের ভেতরে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সোনালির পরিবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি হেবিয়াস কর্পাস মামলা দায়ের করেছে। আদালত এই ঘটনাকে 'অত্যন্ত গুরুতর' বলে মন্তব্য করেছে। তবে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, তারা আইন মেনেই কাজ করেছে। পশ্চিমবঙ্গ মাইগ্র্যান্ট লেবার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান সমীরুল ইসলাম এই ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করে বলেছেন, তারা পরিবারগুলোর পাশে থাকবেন এবং আইনি ও কূটনৈতিকভাবে লড়াই চালিয়ে যাবেন।
সোনালি বিবির গর্ভে থাকা সন্তানের নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদি শিশুটির জন্ম বাংলাদেশে হয়, তবে তার নাগরিকত্ব ভারতীয় নাকি বাংলাদেশি হবে, নাকি সে রাষ্ট্রহীন হবে—তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই ঘটনা ভারতীয় আগ্রাসনের কারণে সাধারণ শ্রমিক পরিবারগুলোর অসহায়ত্বের এক করুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।