জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম
রাজনীতির অঙ্গনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রথমবারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে 'জাতীয় সমাবেশ' আয়োজন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের নজর কেড়েছে। আজ শনিবার (১৯ জুলাই, ২০২৫) বিকেলে লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশকে বিশ্ব গণমাধ্যমগুলো দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো এই সমাবেশ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা এর গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, আগামী বছর প্রত্যাশিত নির্বাচনের আগে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য দেশের বৃহত্তম ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীর লাখ লাখ সমর্থক রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ করেছে। এপি আরও তুলে ধরেছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি বর্তমানে এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জামায়াতের এই পদক্ষেপকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
এপি-র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে যে, পরবর্তী নির্বাচন আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হবে, তবে তার প্রশাসন ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য নির্বাচনের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়নি। এ নিয়ে বিএনপি ও এর মিত্রদেরও জোরালো দাবি আছে।
জামায়াতে ইসলামী, যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, তারা এই সমাবেশে ১০ লাখ লোককে একত্র করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। এপি'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যান। তার শাসনামলে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং অন্যান্য গুরুতর অপরাধের অভিযোগে জামায়াত ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল এবং অনেককে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
তবে, এই জাতীয় সমাবেশে জামায়াত ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের কাছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা, সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি সনদের ঘোষণা ও বাস্তবায়নের জন্য সাত দফা দাবি পেশ করেছে। তারা নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থাও চায়, যা তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম দলটিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ইউনূসের সরকারের রাজনীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। জামায়াত ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে আশা করছে এবং বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পর দেশের তৃতীয় শক্তি হয়ে ওঠার আশায় ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করছে।
এপি আরও উল্লেখ করেছে যে, সমাবেশের আগে জামায়াতে ইসলামীর হাজার হাজার সমর্থক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাত কাটিয়েছিলেন। আজ সকালে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন, যা একটি ঐতিহাসিক ভূমি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই স্থানেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল এবং এর মধ্য দিয়ে ৯ মাসের যুদ্ধের অবসান ঘটেছিল। এই ঐতিহাসিক মাঠে জামায়াতের সমাবেশ তাদের জন্য একটি প্রতীকী বিজয় হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
সমাবেশে উপস্থিত ৪০ বছর বয়সী এক সমর্থক ইকবাল হোসেন দ্য এপিকে বলেন, "আমরা এখানে এমন একটি নতুন বাংলাদেশের জন্য এসেছি, যেখানে ইসলাম হবে শাসনব্যবস্থার মূলনীতি, যেখানে ভালো ও সৎ লোকেরা দেশ শাসন করবে এবং কোনো দুর্নীতি থাকবে না। প্রয়োজনে আমরা এই লক্ষ্যে আমাদের জীবন উৎসর্গ করব।" ২০ বছর বয়সী ছাত্র মহিদুল মোরসালিন সায়েম বলেন, "জামায়াতে ইসলামীর অধীনে এই দেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সব মানুষের তাদের অধিকার থাকবে। কারণ আমরা পবিত্র গ্রন্থ কোরআনের পথ অনুসরণ করি।" তার মতে, "যদি সমস্ত ইসলামী দল শিগগিরই হাত মেলায়, তাহলে কেউ আমাদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারবে না।" এই বক্তব্যগুলো জামায়াত কর্মীদের আদর্শিক অবস্থান এবং তাদের ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরে।
আপনার মতামত লিখুন: