জুলাই ২২, ২০২৫, ০৫:৪২ পিএম
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনায় শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ৬ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মঙ্গলবার (২২ জুলাই, ২০২৫) দুপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত দোয়া ও আলোচনা সভায় এই সমর্থনের কথা জানান জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল। এই সমর্থন দুর্ঘটনার পর সৃষ্ট জনক্ষোভ এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি রাজনৈতিক সংহতির ইঙ্গিত বহন করে।
মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল তার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তে প্রাণহানির ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে কলেজের গোল চত্বরে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে এবং সেখান থেকে তারা ৬ দফা যৌক্তিক দাবি উত্থাপন করেছে। জামায়াত এই সকল দাবির প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ হলো:
১. নিহতদের সঠিক নাম ও পরিচয় প্রকাশ: দুর্ঘটনায় নিহত সকলের সঠিক নাম ও পরিচয় দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করা। ২. আহতদের নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ: আহতদের একটি নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা, যা তাদের পরিবারকে তথ্য পেতে সাহায্য করবে। ৩. সেনাসদস্যদের ক্ষমা চাওয়া: ঘটনাস্থলে শিক্ষকদের গায়ে সেনাসদস্যদের 'হাত তোলার' অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিঃশর্ত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া। ৪. ক্ষতিপূরণ প্রদান: নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া। ৫. ঝুঁকিপূর্ণ বিমান বাতিল: বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বিমান বাতিল করে নতুন ও নিরাপদ প্লেন চালু করা। ৬. প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস: বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ এলাকা মানবিক ও নিরাপদভাবে পুনর্বিন্যাস করা, যাতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উড্ডয়ন বন্ধ হয়।
বুলবুল আরও উল্লেখ করেন, সরকারের দায়িত্ব এসব যৌক্তিক দাবি পূরণে আন্তরিক ভূমিকা পালন করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক দাবিতে বরাবরের মতোই জামায়াতের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।
মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল তার বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রমের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, "জামায়াত কর্মী মানেই সমাজকর্মী। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জামায়াত সবার আগে, সবখানে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, আগামীতেও দাঁড়াবে।" তার দাবি, জামায়াতে ইসলামী বরাবরই দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবার কাজ করে থাকে।
তিনি জানান, বিমান দুর্ঘটনার পর জামায়াত আমির তাৎক্ষণিক দলীয় নেতাকর্মীদের বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশে নেতাকর্মীরা এবং জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকেরা মাইলস্টোনে ছুটে যান। তারা আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া, রক্ত দেওয়াসহ বিভিন্ন মানবিক কাজ করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ফ্রি সার্ভিস দিয়েছে। বুলবুল আরও জানান, জামায়াত আমির একজন চিকিৎসক হিসেবে সেখানে আহত-নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সান্ত্বনা ও সাহস দেওয়ার জন্য ছুটে গিয়েছেন এবং ডাক্তারদেরও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন: