বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২

নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি সংবিধানে উল্লেখ করার বিষয়ে বিএনপি একমত: সালাহউদ্দিন আহমদ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৬:২১ পিএম

নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি সংবিধানে উল্লেখ করার বিষয়ে বিএনপি একমত: সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি- সংগৃহীত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান সংলাপে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি আজ বুধবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১৮তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন প্রস্তাব: সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংলাপে সব পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সিলেকশন কমিটি গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে। এই কমিটিতে থাকবেন: জাতীয় সংসদের স্পিকার (সভাপতি), বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি।

এই কমিটি নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রার্থী খুঁজে বের করতে একটি অনুসন্ধানপ্রক্রিয়া (সার্চ কমিটি) পরিচালনা করবে, যেখানে সিভিল সোসাইটি, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণ নাম জমা দিতে পারবেন। তিনি সংসদে একটি আইন প্রণয়ন করে এই অনুসন্ধান বা সার্চ কমিটির কাঠামো নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, "এই সার্চ কমিটি জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই করে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবে এবং সেটি সিলেকশন কমিটির কাছে পাঠাবে। কমিটি চাইলে এই তালিকা থেকে অথবা নিজেরা আরও প্রার্থী বিবেচনায় নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে কমিশনারদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।"

বিএনপির এই নেতা জানান, কমিশন গঠনে আগে যে প্রস্তাবে প্রতিটি পদের জন্য দুটি করে নাম সুপারিশ করার কথা ছিল, বর্তমান প্রস্তাবে সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন প্রতিটি পদের জন্য একটি করে নাম রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে।

বিএনপি মনে করে, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা শুধু সংবিধানে উল্লেখ থাকলেই যথেষ্ট নয়, উপযুক্ত নিয়োগপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। নিয়োগের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।

এ ছাড়া সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের উপধারায় একটি নতুন সংযোজনের প্রস্তাব দিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, "সংসদ নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করবে এবং তাদের জন্য আচরণবিধি নির্ধারণ করবে।"

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, "আমরা এমন একটি নির্বাচন কমিশন চাই, যারা কার্যত স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। তাই তাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কার্যক্রম পর্যন্ত সবখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকতে হবে। অতীতে আমরা দেখেছি, একাধিকবার নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে, কিন্তু কার্যত তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি।"

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিপ্রেক্ষিতে তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, "আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতি আজ ঐক্যবদ্ধভাবে সে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। এখন শুধু আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া বাকি। আমরা ধরে নিচ্ছি, পরবর্তী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হবে।"

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোকে তাঁর বাসভবন যমুনায় জরুরি আলোচনার জন্য ডেকেছেন। ফলে আজ পূর্ণদিন আর কমিশনের আলোচনা হয়নি; অর্ধদিন আলোচনা শেষে বৈঠক শেষ হয়।

আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল।

বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।