বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

লোক দেখানো ইবাদতের ভয়াবহ পরিণতি

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৯, ২০২৫, ০৫:১১ পিএম

লোক দেখানো ইবাদতের ভয়াবহ পরিণতি

সংগৃহীত ( প্রতীকি ছবি )

ইবাদত যদি একনিষ্ঠতার মোড়কে আবদ্ধ থাকে, তখন তা হয় নিজের দুনিয়ার প্রশান্তি আর আখিরাতের চিরস্থায়ী জিন্দেগির শান্তির উপকরণ। কিন্তু যদি সেই ইবাদতের আড়ালে থাকে লোক দেখানোর বিষবাষ্প, ইবাদত তখন ইবাদত থাকে না। তা হয়ে যায় ‘রিয়া’; যা এক ছলনা, এক আত্মপ্রবঞ্চনা, যেটি মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করার পরিবর্তে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

‘রিয়া’ শব্দের অর্থই হলো লোক দেখানো, অর্থাৎ মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করা বা নেক কাজ করা। ইসলামে এই কাজকে শুধু নিন্দনীয়ই বলা হয়নি; বরং একে শিরক-এর একটি সূক্ষ্ম রূপ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

হাদীসে এসেছে, ‘আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসের ভয় করি তা হলো ছোট শিরক ‘রিয়া’।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩৬৩০)

এই গোপন পাপের পরিণতি এতটাই ভয়াবহ যে, কিয়ামতের দিন অনেক ‘নামধারী ইবাদতকারীর’ মুখোশ খুলে ফেলা হবে; তারা ভাবত তারা সালেহ, অথচ আল্লাহর কাছে তারা হবে প্রতারক।

প্রিয় পাঠক! আসুন এবার লোক দেখানো ইবাদতের ধিক্কারজনক কিছু পরিণতির আলোচনা করি, যেগুলো একজন মুমিনের হৃদয় কাঁপিয়ে দেয়:

 

নিজের ধ্বংস এবং কোনো সওয়াব না পাওয়া

লোক দেখানো ইবাদতের সবচেয়ে প্রথম ও গুরুতর ফল হলো; এতে সওয়াব সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি। এমন ব্যক্তি দুনিয়াতে মানুষের প্রশংসা পেলেও আখিরাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিছুই পাবে না। বরং তার আমল ধূলায় মিশে যাবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের দান-খয়রাত বরবাদ করো না এই ব্যক্তির মতো, যে তার ধন-সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য…’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৪)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে: ‘ধ্বংস সেই নামাজিদের জন্য, যারা তাদের নামাজে অবহেলা করে এবং লোক দেখায়।’ (সুরা আল-মাউন আয়াত : ৪-৬)

 

কিয়ামতের দিন সিজদার অযোগ্যতা

কেয়ামতের ময়দানে যখন আল্লাহর নেককার বান্দারা সিজদাবনত হবে, তখন রিয়াকারদের জন্য সেই সৌভাগ্য হবে না। তারা সিজদা করতে চাইবে কিন্তু পারবে না। আল্লাহ তাদের মেরুদণ্ডকে এমনভাবে শক্ত করে দেবেন যে, তারা মাথা নত করতে পারবে না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করত, কিয়ামতের দিন তারা সিজদা করতে পারবে। আর যারা লোক দেখিয়ে সিজদা করত, তাদের পিঠ হবে এক টুকরো কঠিন লোহার মতো, তারা সিজদা করতে পারবে না।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৮৩)

 

আল্লাহর দরবারে চরম অপমান

লোক দেখানোর জন্য যারা ইবাদত করেছে, কিয়ামতের দিনে তারা আল্লাহর নিকট কোনো পুরস্কার পাবে না। বরং আল্লাহ নিজেই তাদেরকে বলবেন: ‘যাদের জন্য তোমরা দুনিয়ায় আমল করেছিলে, আজ তাদের কাছে যাও। দেখো, তারা তোমাদের জন্য কিছু করতে পারে কিনা!’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৩৬৩০)

এ এক অপমানের চূড়ান্ত রূপ, যেখানে বান্দা প্রকাশ্যে জানবে তার সব সাধনা, সব রাতজাগা, সব কোরআন তিলাওয়াত অনর্থক—কারণ সে এসব করেছিল শুধুই মানুষের চোখে ভালো সাজার জন্য।

 

রিয়াকারদের উদ্দেশ্য সর্বসম্মুখে প্রকাশ করে দেওয়া হবে

যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি নয় বরং মানুষের প্রশংসা কামনায় ইবাদত করে, কিয়ামতের দিন তার গোপন ইচ্ছা জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘যে ব্যক্তি লোক শোনানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত করে, আল্লাহ তা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য ইবাদত করে, আল্লাহ তার উদ্দেশ্যকে প্রকাশ্যে তুলে ধরবেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৪৯৯)

আহ! কী লজ্জার মুহূর্ত সেটি। যখন সবার সামনে প্রকাশিত হবে যে, তার দুনিয়ার সমস্ত ইবাদত ছিল ‘প্রশংসা পাওয়ার অভিনয়’ মাত্র।

লোক দেখানো ইবাদতের ভয়াবহতা এতটাই ব্যাপক যে, এটি বান্দার আমলকে শুধু বরবাদ করে না, বরং তাকে দোজখের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। তাই আসুন, প্রতিটি ইবাদতের আগে আমরা আত্মাকে প্রশ্ন করি: ‘আমি এটা কার জন্য করছি?’ যদি উত্তর হয়: শুধু আল্লাহর জন্য, তবেই সে ইবাদত হবে আলোকিত। আর যদি তাতে থেকে যায় রিয়ার ছায়া, তবে তা এক ভয়ানক প্রতারণা, যার শাস্তি হতে পারে অপূরণীয়।

মহান আল্লাহ আমাদের সকল লৌকিকতা মুক্ত হয়ে বিশুদ্ধ চিত্তে মহান রবের ইবাদত করার তাওফিক দান করুন।