শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

শেষ সময়ে বাজারে কোন আম পাওয়া যাচ্ছে, দাম কেমন

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৩:৫৯ পিএম

শেষ সময়ে বাজারে কোন আম পাওয়া যাচ্ছে, দাম কেমন

ছবি- সংগৃহীত

চট্টগ্রামের স্টেশন রোডের ফলমন্ডিতে আমের মৌসুম এখন প্রায় শেষের দিকে। আড়তগুলোতে বেচাকেনা কমে এসেছে, তবে খুচরা বাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে। এ বছর আমের উৎপাদন ভালো হলেও আড়তদার ও বাগানমালিকেরা লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

ফলমন্ডিতে শফিউল আজমের মতো অনেক আড়তদার এখন মৌসুমের শেষ সময়ের বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত। নওগাঁয় প্রায় আড়াই শ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে আমের বাগান করা শফিউল আজম জানান, আর মাসখানেক আম বাজারে থাকবে। বর্তমানে তার আড়তে আম্রপালি, বারি-৪, ফজলি, রুপালি ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো—এই পাঁচ জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে।

গতকাল (শনিবার) দুপুরে তার আড়তে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা অলস বসে আছেন, বেচাকেনা কম। পাইকারিতে আমের দাম:

  • আম্রপালি: ৯০ থেকে ১২০ টাকা প্রতি কেজি।

  • বারি-৪: ৬৫ থেকে ৮০ টাকা প্রতি কেজি।

  • রুপালি: ৬০ থেকে ১০০ টাকা প্রতি কেজি।

  • ফজলি: ৬০ থেকে ৮০ টাকা প্রতি কেজি।

  • ব্যানানা ম্যাঙ্গো: ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা প্রতি কেজি।

শফিউল আজম জানান, এ বছর শুরু থেকেই আমের দাম কম ছিল, পাইকারিতে প্রতি কেজি ৩০ টাকা পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল। জেলা পর্যায়ে দাম ছিল আরও কম। যদিও এখন দাম কিছুটা বেড়েছে, তবুও খরচের টাকা উঠছে না।

তিনি হিসাব দিয়ে বলেন, ১৫ বছরের জন্য বাগান ইজারা নিয়েছেন। প্রতি বিঘায় বছরে শ্রমিক মজুরি, বীজ, সার—সব মিলিয়ে গড়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। সাধারণত এক বিঘা থেকে ৭০ হাজার টাকা তুলে আনার চেষ্টা থাকে, কিন্তু এ বছর প্রতি বিঘায় ৪০ হাজার টাকার বেশি উঠবে না। তিনি জানান, প্রায় সব আড়তদারের অবস্থা একই।

দেশের মোট আম উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশই আম্রপালি। শফিউল আজম বলেন, এবার আম্রপালির উৎপাদন বেশি হয়েছে, তবে প্রচুর আম নষ্টও হয়েছে, কেননা শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টি কম ছিল।

দেশের সর্বত্র আমের চাষ হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর এবং পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে আমের উৎপাদন বেশি হয়। এসব জেলা থেকে আম এসে পৌঁছায় ফলমন্ডির আমের আড়তগুলোতে। আড়তদারেরা মিশ্র পদ্ধতিতে ব্যবসা করেন—কেউ জমি ইজারা নিয়ে বাগান করেন, কেউ বাগানমালিকের কাছ থেকে কিনে নেন। উপজেলা ও শহরের খুচরা পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা ফলমন্ডি থেকে নানা জাতের আম কিনে নেন।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, আমের মৌসুম থাকে প্রায় পাঁচ মাস। এর মধ্যে জুন ও জুলাই মাসে আমের বাজার রমরমা থাকে। ১৫ মে থেকে উন্নত জাতের আমের মৌসুম শুরু হয়। এ সময় গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ আসতে থাকে। ধাপে ধাপে বাজারে আসে আম্রপালি, ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙার মতো আম। বাজারে বেচাবিক্রি চলে আগস্ট মাস পর্যন্ত। আগামী এক মাসে মোহনভোগ, আশ্বিনা, গৌরমতি, চোষা, বারি-৪, ফজলি এই আমগুলো পাওয়া যাবে। এ সময়ের মধ্যে আম্রপালি, রুপালি উঠে যাবে।

গতকাল ফলমন্ডিতে ট্রাকে ট্রাকে আম ঢুকতে দেখা গেছে। শ্রমিকেরা আমের ঝুড়ি নামিয়ে আড়তে নিচ্ছিলেন এবং দর-কষাকষি চলছিল। শেষ মুহূর্তে আম্রপালি, বারি-৪, ফজলি, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, রুপালি এবং টুকটাক আশ্বিনা আসছে।

গাউছিয়া ফলবিতানের কর্ণধার মোহাম্মদ আরিফ বলেন, "আমের উৎপাদন ভালো হওয়ার কারণে ভোক্তারা কম দামে আম পেয়েছেন। তবে আড়তদার ও বাগানমালিকেরা লোকসান গুনেছেন।"

পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ রফিক জানান, তিনি ১০০ কেজি আম্রপালি কিনেছেন ৮০ টাকা দরে এবং পরিবহন খরচসহ ১০০ বা ১০৫ টাকায় বিক্রি করবেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম, যিনি স্টেশন রোডে আম কিনছিলেন, বলেন, "তিন দিনের ব্যবধানে আমের দাম কেজিতে অন্তত ২০ টাকা বেড়েছে। যেমন গত বুধবার তিনি পাঁচ কেজি আম্রপালি কেনেন ৯০ টাকা দরে, কিন্তু গতকাল কিনেছেন ১১০ টাকা কেজি দরে।"

খুচরা বিক্রেতা আরমান মিয়া জানান, তিনি বারি-৪ জাতের আম ৮০ টাকা কেজি দরে, ফজলি ৯০ টাকা, আম্রপালি ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং ব্যানানা ম্যাঙ্গো ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। গত তিন দিনের তুলনায় দাম কিছুটা বাড়লেও ক্রেতা কমেনি।