জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম
রাজশাহীর কাঁকনহাটে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি ও নানা অনিয়মের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) কৃষকেরা বিক্ষোভ করেছেন। বিসিআইসির ডিলার মেসার্স জি কে ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনে তারা কাঁকনহাটের বাজারে সড়ক অবরোধ করেন, যা পৌর শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি করে।
সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই অবরোধ চলে। পরে পুলিশ এসে তাদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে কৃষকেরা মিছিল করে কর্মসূচি শেষ করেন। সমাবেশ থেকে তারা মেসার্স জি কে ট্রেডার্সের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানান।
সমাবেশে কৃষক মেহেদী হাসান বলেন, "জি কে ট্রেডার্স পরিচালনা করেন তুহীনা আক্তার নামের এক নারী। তিনি বাড়তি টাকা ছাড়া সার দেন না।" তার অভিযোগ, বাড়তি টাকা নেওয়ার কারণে তুহীনা আক্তার সার বিক্রির কোনো রশিদ দেন না। কৃষকদের বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হয়। তিনি আরও বলেন, "৫ বস্তা সার চাইলে তিনি ১০ কেজি দিয়ে ফিরিয়ে দেন। আবার অনেককে সার না দিয়েই ফিরিয়ে দেন।" কৃষকদের দাবি, তুহীনা আক্তার তাদের জন্য বরাদ্দকৃত সার তানোর উপজেলায় বেশি দামে সরবরাহ করেন।
কৃষকেরা জানান, সরকার নির্ধারিত ডিএপি সারের দাম যেখানে প্রতি বস্তা ১ হাজার ৫০ টাকা, সেখানে তুহীনা আক্তার নিচ্ছেন ১ হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। টিএসপির দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা হলেও তিনি নেন দেড় হাজার টাকা। এ ছাড়া ১ হাজার টাকার পটাশের দাম নেন ১ হাজার ২০০ টাকা। তাদের অভিযোগ, প্রায় দুই বছর ধরে তুহীনা আক্তার কৃষকদের জিম্মি করে এই বাড়তি টাকা নিচ্ছেন।
মিনারুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, "আমি নিজে চাষাবাদের পাশাপাশি ট্রাক থেকে মাল নামাই। নিজে শত শত বস্তা সার তুহীনা আক্তারের গুদামে ঢুকাই। কিন্তু দুইদিন পরই তিনি বলতে থাকেন কোনো সার নেই। তিনি নাকি বাইরে থেকে বেশি দামে সার আনেন। এ কথা বলে তিনি কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করেন।"
কৃষকেরা অভিযোগ করেন, বাড়তি টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করলে তুহীনা আক্তার নারী নির্যাতন মামলা দেওয়ার হুমকি দেন, ফলে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। তবে এবার তারা সাহস করে তুহীনার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মেসার্স জি কে ট্রেডার্সের দোকানে গিয়ে তুহীনা আক্তারকে পাওয়া যায়নি। দোকানে ছিলেন তার বাবা তাহাসেন আলী। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা ন্যায্য দামেই কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
গোদাগাড়ীর ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, "গত সপ্তাহে জি কে ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে কৃষকদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এরপর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তদন্ত কমিটি গতকাল শুনানি করেছে। উভয়পক্ষের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।"
আপনার মতামত লিখুন: