শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

রাশিয়ার রকেটে ইরানি স্যাটেলাইট

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৫, ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম

রাশিয়ার রকেটে ইরানি স্যাটেলাইট

ছবি- সংগৃহীত

বহু বছর ধরেই ইরান তার পারমাণবিক এবং সামরিক কর্মসূচির জন্য আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার শিকার। তা সত্ত্বেও, দেশটি নিজস্ব মহাকাশ প্রযুক্তির উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি ইরানের তৈরি একটি স্যাটেলাইট সফলভাবে রাশিয়ার একটি রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, যা দেশটির মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি বড় অর্জন। এই পদক্ষেপটি কেবল প্রযুক্তিগত সাফল্যই নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইরান ও রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদারিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকও তুলে ধরে। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক মহলে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে এবং বিশেষজ্ঞরা এর সম্ভাব্য ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করছেন।


ইরানের তৈরি নাহিদ-২ স্যাটেলাইট সফলভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, যা দেশটির প্রযুক্তিগত সক্ষমতার একটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। শুক্রবার রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলের ভোস্তোচনি কসমোড্রোম থেকে রুশ সয়ুজ রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এই সফল উৎক্ষেপণ মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটে ইরানকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে এসেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।

নাহিদ-২ স্যাটেলাইটটি ইরান স্পেস এজেন্সি ও ইরান স্পেস রিসার্চ সেন্টারের যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত একটি গবেষণা ও টেলিযোগাযোগ স্যাটেলাইট। এটি একটি বহুজাতিক মহাকাশ মিশনের অংশ ছিল, যেখানে রাশিয়ার ‘আইনোসফেরা-এম৩’ এবং ‘এম৪’ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট ২০টি স্যাটেলাইট অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর আগেও রাশিয়ার সয়ুজ রকেটের মাধ্যমে ইরানের খায়য়াম, পার্স-১ এবং হোধান স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল, যা দুই দেশের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত সহযোগিতার ইঙ্গিত দেয়।

নাহিদ-২ পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঁচ বছর মহাকাশে অবস্থান করবে। দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ মিশনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কক্ষপথ থেকে ধীরে ধীরে স্যাটেলাইটের বিচ্যুতি। এই সমস্যা সমাধানের জন্য নাহিদ-২ তে সম্পূর্ণ ইরানীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত একটি প্রপালশন সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে, যা স্যাটেলাইটটিকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতা পরিবর্তনের সক্ষমতা দেয়।

এই প্রপালশন সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়েছে হট গ্যাস থ্রাস্টার, কম্পোজিট ফুয়েল ট্যাঙ্ক এবং উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রক ভালভ। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব উন্নত উপাদান সহজলভ্য না হওয়ায় ইরানি প্রকৌশলীরা সেগুলো স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবন ও উৎপাদন করেছেন। প্রপালশন সিস্টেম ছাড়াও স্যাটেলাইটটির তাপ নিয়ন্ত্রণ ও তাপ পরিবাহিতার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে দেশীয়ভাবে উদ্ভাবিত পলিমার-ভিত্তিক কোটিং এবং স্পেস-গ্রেড আঠালো পদার্থ।

নাহিদ-২ এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর শক্তিশালী লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি, যা ইরানেই তৈরি এবং কয়েক হাজার চার্জ-ডিসচার্জ সাইকেল অতিক্রম করার মতো সক্ষম। এই ব্যাটারিগুলো স্যাটেলাইটের দীর্ঘস্থায়ী কার্যকারিতা নিশ্চিত করবে।