শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

ঘুমের সময় কেন ক্লান্তি আসে, জানালেন বিজ্ঞানীরা নতুন গবেষণায়

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৫, ২০২৫, ০৭:১৩ পিএম

ঘুমের সময় কেন ক্লান্তি আসে, জানালেন বিজ্ঞানীরা নতুন গবেষণায়

ছবি- সংগৃহীত

ঘুম মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা শরীর ও মনকে সতেজ রাখতে অপরিহার্য। কিন্তু কেন আমাদের ঘুম আসে, এবং ঘুমের সময় মস্তিষ্কের ভেতরে ঠিক কী ঘটে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে আসছেন। ঘুমের তীব্র আকাঙ্ক্ষা বা 'স্লিপ প্রেসার' কেন তৈরি হয়, তা এতদিন অস্পষ্ট ছিল। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি যুগান্তকারী গবেষণা এই রহস্যের ওপর নতুন আলো ফেলেছে এবং প্রমাণ করেছে যে ঘুম আসলে ক্লান্তির ফল নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ মেরামত প্রক্রিয়া।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক নতুন গবেষণা অনুযায়ী, ঘুমের জন্য মস্তিষ্কই প্রধানত দায়ী। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মস্তিষ্কের 'স্লিপ-কন্ট্রোল নিউরন'-এর মাইটোকন্ড্রিয়ায় অতিরিক্ত ইলেকট্রন জমে গেলে ঘুমের সূচনা হয়। ঘুম তখন একদিকে ইলেকট্রনের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে, অপরদিকে মাইটোকন্ড্রিয়ার ক্ষতিও মেরামত করে।



 

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক জেরো মিসেনবক, যিনি এই গবেষণাপত্রটির অন্যতম লেখক, জানান, মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু নিউরনের মাইটোকন্ড্রিয়ার অতিরিক্ত ক্ষতির সংকেত পেলে ঘুমের সূচনা হয়। এই নিউরনগুলো একটি সার্কিট ব্রেকারের মতো কাজ করে।

এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য গবেষকরা ফলের মাছি নিয়ে একাধিক পরীক্ষা চালান। তারা দেখেন যে, মাছিদের স্বাভাবিক ঘুমচক্র ব্যাহত হলে তাদের মস্তিষ্কের ঘুম নিয়ন্ত্রণকারী নিউরনের মাইটোকন্ড্রিয়াগুলো ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যা ইলেকট্রন-সম্পর্কিত ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু ঘুমের পর সেই মাইটোকন্ড্রিয়াগুলো আবার একত্রিত হয়ে যায়।

 

গবেষকরা আরও বলেন, এটি ইঙ্গিত দেয় যে মাইটোকন্ড্রিয়ার ক্ষতি থেকেই ঘুমের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হতে পারে। এই তত্ত্ব কার্যকর কিনা তা প্রমাণ করতে, তারা একটি পরীক্ষায় ডিএফবিএন নিউরনের মাইটোকন্ড্রিয়াকে একটি বিকল্প শক্তির উৎস দেন। ফ্ল্যাশলাইটের আলো ব্যবহার করে এই প্রোটিন সক্রিয় করার পর দেখা যায়, যে মাছিগুলো ঘুম-বঞ্চিত ছিল না, সেগুলোও আলো লাগার মাত্র প্রথম ঘণ্টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে, যা মাইটোকন্ড্রিয়ার ইলেকট্রন ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটার কারণে ঘটে। এই পরীক্ষা প্রমাণ করে যে, মাইটোকন্ড্রিয়ার ইলেকট্রন ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটালেই ঘুম আসতে পারে, এমনকি যখন প্রাণীটি স্বাভাবিকভাবে ক্লান্ত না-ও থাকে।

ঘুমের সময় মস্তিষ্ক


 

সম্প্রতি 'ন্যাচার' সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে— ঘুমের আকাঙ্ক্ষার সবচেয়ে দৃঢ় প্রমাণ এখন পাওয়া গেছে। এটি সম্ভবত নির্দিষ্ট কিছু মস্তিষ্ককোষের মাইটোকন্ড্রিয়ায় ইলেকট্রনের জমার ফল। যদি এ তত্ত্ব সত্য হয়, তবে ঘুমের উদ্ভব হয়েছিল মাইটোকন্ড্রিয়ার মেরামত প্রক্রিয়া হিসেবে। পরে স্মৃতি সংরক্ষণ বা রোগপ্রতিরোধের মতো অন্য সুবিধাগুলো ধাপে ধাপে যুক্ত হয়েছে।
 

কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ইভানা রোসেনৎসভেইগ বলেন, এই আবিষ্কারটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণাগত পরিবর্তন নির্দেশ করে। আগে ধারণা ছিল, মাইটোকন্ড্রিয়ায় ইলেকট্রনের ভারসাম্যহীনতা হয়তো ঘুমের অভাবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু এই গবেষণাটি প্রমাণ দিয়েছে—এটি আসলে ঘুমের চাপ বা প্রয়োজনের কারণ হতে পারে।

 

গবেষকরা আরও বলেন, যেহেতু প্রাণীদের মধ্যে কোষে শক্তি সরবরাহের প্রক্রিয়া ও ঘুমের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তাই সম্ভবত মানুষের ক্ষেত্রেও ইলেকট্রন জমে ঘুমের চাপ সৃষ্টি করে। যেসব মানুষ মাইটোকন্ড্রিয়াল সমস্যায় ভোগেন, তারা প্রায়ই ক্লান্তি ছাড়াও ঘুমঘুম ভাব অনুভব করেন।