শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

দিনে কতগুলো ডিম খাওয়া নিরাপদ? পুষ্টিবিদদের পরামর্শ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৩, ২০২৫, ১০:৪৩ এএম

দিনে কতগুলো ডিম খাওয়া নিরাপদ? পুষ্টিবিদদের পরামর্শ

ছবি- সংগৃহীত

ডিম আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকা একটি সহজলভ্য ও পুষ্টিকর খাবার। এর প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের কারণে এর চাহিদা ব্যাপক। তবে দিনে ঠিক কতগুলো ডিম খাওয়া নিরাপদ, এই প্রশ্ন প্রায়শই মানুষের মনে আসে। পুষ্টিবিদরা এই বিষয়ে কী বলছেন এবং অতিরিক্ত ডিম খাওয়ার সম্ভাব্য ঝুঁকি কী, তা জেনে নেওয়া যাক।

 

কটি মাঝারি আকারের ডিমে সাধারণত ৬ থেকে ৭ গ্রাম প্রোটিন এবং প্রায় ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। এছাড়াও, এটি ভিটামিন B12, D ও A-এর ভালো উৎস। ডিমের মধ্যে থাকা কোলিন, লুটিন, এবং জিয়্যাক্সানথিন চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, আর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, বিশেষ করে DHA, মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের জন্য উপকারী। এই পুষ্টিগুণগুলো ডিমকে একটি দারুণ স্বাস্থ্যকর খাবার বানায়।

 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ প্রকাশ কদম। তার মতে, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন বা একবারে ১ থেকে ৩টি ডিম নিরাপদে খেতে পারেন। দিনে ২-৩টি ডিম খেলে প্রায় ১৮ থেকে ২১ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়, যা একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক প্রোটিন চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করে।

তবে, পুষ্টিবিদরা জোর দিয়ে বলছেন, যাদের কোলেস্টেরল বা হৃদরোগজনিত সমস্যা আছে, তাদের অতিরিক্ত ডিম খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। একটি ডিমে থাকা উচ্চ কোলেস্টেরল তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

 

পুষ্টিবিদরা অতিরিক্ত ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন:

  • কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়া: একটি ডিমে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকে। তাই কেউ যদি দিনে ৩টির বেশি ডিম খান, তাহলে হার্ট অ্যাটাক বা ধমনীতে ব্লকেজের ঝুঁকি বাড়তে পারে, বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি।

  • কিডনির ওপর চাপ: বেশি প্রোটিন গ্রহণ করলে দীর্ঘমেয়াদে কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে এই ঝুঁকি আরও বাড়ে।

  • বদহজম ও গ্যাসের সমস্যা: অনেকে ডিম খাওয়ার পর পেট ফাঁপা, ঢেকুর, বা গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন। যাদের এমন সমস্যা আছে, তাদের ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত।

 

ডিম খাওয়ার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায় হলো সেদ্ধ করে খাওয়া, কারণ এতে ক্যালোরি ও কোলেস্টেরল কম থাকে। ভাজা ডিমে ট্রান্সফ্যাট ও কোলেস্টেরল বেশি থাকতে পারে। তবে, চাইলে অল্প তেলে হালকা পোচ বা স্ক্র্যাম্বলড করে খাওয়া যেতে পারে। তবে পুষ্টিবিদরা সাধারণত সকালে নাশতায় সেদ্ধ ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন।

একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দিনে ১-২টি ডিম খেতে পারেন। যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন বা পেশি গঠনে মনোযোগী, তারা দিনে ৩টি ডিম পর্যন্ত খেতে পারেন। কিন্তু ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, বা কিডনি-সম্পর্কিত কোনো সমস্যা থাকলে ডিম খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে ডিম ছাড়াও মুরগির মাংস, টুনা মাছ, ডাল ও ছোলা, দুধ-দই, বাদাম, এবং বিভিন্ন ধরনের বীজ খাওয়া যেতে পারে।

পরিশেষে, ডিম একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের উৎস। তবে, এটি খাওয়ার সময় ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা করে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। সুস্থ মানুষ দিনে ১ থেকে ৩টি ডিম খেতে পারেন, তবে খাদ্যতালিকায় সবসময় ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।