জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৭:৪৯ পিএম
কোনো আকস্মিক ও ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে যখন হতাহতের আশঙ্কা থাকে, তখন প্রথম রেসপন্ডিং টিমগুলোর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি ছিল তেমনই এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সেনাবাহিনীর প্রথম রেসপন্ডিং টিমকে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তাদের অভিজ্ঞতা এই দুর্ঘটনার ভয়াবহতাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ঘটনাস্থলে প্রবেশ করে সেনাবাহিনীর প্রথম রেসপন্ডিং দল যে দৃশ্য দেখেছিল, তা ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক। প্রথমেই তারা দুটি দগ্ধ মরদেহ দেখতে পায়। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের কাছে উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া সেনাবাহিনীর ৪৩ রেজিমেন্ট ব্যাটালিয়নের কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান।
মেজর মেহেদী হাসান বলেন, "বিমান বিধ্বস্তের সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রথম রেসপন্ডিং টিম হিসেবে মাইলস্টোন স্কুলে প্রবেশ করি। প্রবেশ করেই দুটি মরদেহ দেখতে পাই। বিমানটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেখানে আগুন জ্বলছিল। আগুনের সামনেই দুটি মরদেহ পড়ে ছিল। আমাদের চোখে প্রথম যে দৃশ্যটি ধরা পড়ে, সেটাই ছিল সবচেয়ে কষ্টের। এই স্পটে এসে, ওটা দেখার পরই আমরা আমাদের উদ্ধার কার্যক্রমটা শুরু করি।"
দুর্ঘটনার কত সময় পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেজর মেহেদী হাসান জানান, "আমরা এখানে আনুমানিক দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে পৌঁছাই। যেহেতু আমাদের ক্যাম্পের অবস্থান ১০০ থেকে ১৫০ গজের মধ্যে, সেহেতু আমাদের আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি।" তার কথায় দ্রুত সাড়া দেওয়ার গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
উদ্ধার কার্যক্রমের সময় নিজেদের সদস্যদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে মেজর মেহেদী হাসান বলেন, "উদ্ধার কার্যক্রম শেষ করার পর মোট আমাদের (সেনাবাহিনী) ২৫ জনের মতো সৈনিক অসুস্থ হয়েছিল, কিন্তু ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে কেউ নেই। বর্তমানে ১১ জন সৈনিক ঢাকার সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।" এই তথ্য উদ্ধারকাজের কঠিন পরিস্থিতি এবং সেনাদের আত্মত্যাগের চিত্র তুলে ধরে।
ভেতরে কতটা মরদেহ দেখেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমরা এখানে সবাই কাজ করছিলাম, একেকজনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে চেষ্টা করেছি। এখন সঠিক সংখ্যাটা স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং যারা হাসপাতালে আছেন, তাদের সমন্বয়ে আসলে আপনারা (সাংবাদিক) পেয়ে যাবেন। আমরা উদ্ধার কার্যক্রমকেই মেইন ফোকাসে রেখে কাজ করেছি, কতজনকে নিয়ে যেতে পেরেছি, আসলে ওই সময় আমাদের ওইটা কাজ করে নাই। আমরা যাদের সামনে পেয়েছি, তাদের একটা নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে কাজ করেছি।" তার এই কথাগুলো উদ্ধারকারীদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিস্থিতির জটিলতাকে বোঝায়।
আপনার মতামত লিখুন: