শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হত্যা: যুবকের মৃত্যুদণ্ড

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৮:৪৯ পিএম

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হত্যা: যুবকের মৃত্যুদণ্ড

ছবি- সংগৃহীত

নারীর প্রতি সহিংসতা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুতর সমস্যা। বিশেষ করে প্রেম বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রত্যাখ্যানকে কেন্দ্র করে যখন হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে, তখন তা সমাজের গভীরে থাকা নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরে। এমন অপরাধের ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক রায় প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা অপরাধীদের মনে ভীতি সৃষ্টি করে এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। নেত্রকোনার পূর্বধলায় কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় এক নারীকে গলা কেটে হত্যার দায়ে এক যুবকের মৃত্যুদণ্ড তেমনই এক দৃষ্টান্তমূলক রায়।

কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় এক নারীকে গলা কেটে হত্যার অপরাধে রাসেল মিয়া (২৮) নামে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নেত্রকোনার জেলা ও দায়রা জজ মো. হাফিজুর রহমান এই রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত রাসেল মিয়া পূর্বধলা উপজেলার পূর্বধলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের আলাল উদ্দিনের ছেলে। নিহত লিপি আক্তার (৩২) একই গ্রামের বিজিবি সদস্য আজিজুল ইসলামের স্ত্রী।



 

রায়ের বিবরণে জানা গেছে, স্বামী বিজিবিতে চাকরি করার কারণে লিপি তার ছেলেকে নিয়ে পূর্বধলা পশ্চিমপাড়া গ্রামে বোনের বাড়িতে বসবাস করতেন। দণ্ডপ্রাপ্ত রাসেল মিয়া ছিলেন লিপির বোনের চাচাতো দেবর। তিনি লিপিকে প্রায়শই উত্ত্যক্ত করতেন এবং তাকে বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিতেন। বিষয়টি জানার পর লিপির স্বামী আজিজুল ইসলাম রাসেলের মা-বাবা ও তার বড় ভাইকে বিষয়টি অবহিত করেন।

এই ঘটনার জেরে রাসেল মিয়া প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর রাত আড়াইটার দিকে লিপি তার ছেলেকে নিয়ে ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। এই সুযোগে রাসেল কৌশলে লিপির ঘরে প্রবেশ করে এবং ধারালো অ্যান্টিকাটার দিয়ে তার গলার শ্বাসনালী কেটে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই লিপির মৃত্যু হয়।

এই মর্মান্তিক ঘটনায় লিপির বড়বোন ফেরদৌসী আক্তার বাদী হয়ে রাসেলের বিরুদ্ধে পূর্বধলা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারের পর রাসেল মিয়া আদালতে তার অপরাধ স্বীকার করেন। মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক মো. হাফিজুর রহমান রাসেল মিয়াকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় রাসেল মিয়া আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম। আর আসামিপক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান। এই রায় সমাজে নারী নির্যাতন ও হত্যার বিরুদ্ধে এক কঠোর বার্তা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।