মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২
লটকন চাষ

বিজিবি সদস্যের সমন্বিত কৃষি খামার: সফলতার গল্প

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৮, ২০২৫, ০২:১৯ পিএম

বিজিবি সদস্যের সমন্বিত কৃষি খামার: সফলতার গল্প

পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলায় বিজিবি সদস্য মো. বাদশাহ, যিনি রাসেল নামেও পরিচিত, তার এবি এগ্রো ফার্মে সমন্বিত কৃষি কার্যক্রমের মাধ্যমে এক সফল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার এই খামারে চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কৃষি কাজ পরিচালিত হচ্ছে। একসময় বুনো ফল হিসেবে পরিচিত লটকন এখন উচ্চ বাজার চাহিদার কারণে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। রাসেলের খামারে প্রায় দুই বিঘা জমিতে ১২০টি লটকন গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছ থেকে কমপক্ষে ২০ কেজি ফলন আশা করা হচ্ছে, যা থেকে অতিরিক্ত ২,০০,০০০ টাকা আয় হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। গাছগুলো তিন বছর পর ফল দেওয়া শুরু করেছে এবং এটি দ্বিতীয় ফসল তোলার মৌসুম। থাই বাড়ি ওয়ান জাতের লটকন ফলগুলো তাদের আকর্ষণীয় রঙ এবং ন্যূনতম যত্নে ভালো লাভের জন্য পরিচিত। নতুন পাতায় ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টিকারী পাতাখেকো পোকার জন্য প্রতি দুই মাস অন্তর (বড় গাছের জন্য প্রতি ছয় মাস অন্তর) গাছের গোড়ায় এক চিমটি দানাদার বিষ প্রয়োগ করা হয়। লটকন চাষের জন্য দোআঁশ মাটি আদর্শ। ভার্মিকম্পোস্ট গাছের জৈব সারের চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয়, যা ফলের আকার, চেহারা এবং ফলন বাড়ায়। এছাড়াও, গাছের চারপাশে গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশের মিশ্রণ প্রয়োগ করা হয়।

খামারে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সুপারি বাগান রয়েছে, যার বয়স প্রায় ১৫-১৬ বছর। এখানে ৬০০টিরও বেশি সুপারি গাছ আছে। প্রতিটি গাছ থেকে ৫০০ টাকা আয় হতে পারে, যা সুপারি বিক্রি থেকে মোট ৩,০০,০০০ টাকা আয় এনে দেবে। সুপারিগুলো পাকার তিন মাস আগেই পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে অগ্রিম বিক্রি করা হয়। এই খামারে কমলা এবং মাল্টা চাষের পাশাপাশি মাছ চাষও করা হয়। গাছের যত্নের জন্য এবং জৈব সারের চাহিদা মেটাতে খামারে ভার্মিকম্পোস্ট সার উৎপাদন করা হয়।

রাসেল একজন বিজিবি সদস্য যিনি তার ছুটির সময় খামারটি পরিচালনা করেন। তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং জাতীয় পর্যায়ে জুডোতেও তার পটভূমি রয়েছে। সরকারি চাকরি থাকা সত্ত্বেও, তার শৈশব থেকেই কৃষির প্রতি যে আবেগ ছিল, তা তাকে এই কাজে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রাথমিকভাবে, তার কৃষি উদ্যোগের জন্য মানুষ তাকে পাগল বলত, কিন্তু ফলন দেখার পর এখন তারা তার প্রশংসা করে। তিনি সারা দেশে আধুনিক ও বাণিজ্যিক কৃষির প্রসার ঘটাতে চান। তিনি বেকার যুবক এবং শিক্ষার্থীদের কৃষিতে উদ্যোগী হতে উৎসাহিত করেন, জোর দিয়ে বলেন যে এটি প্রচলিত চাকরি বা ব্যাংক সুদের মতো নয়, বরং একটি স্থিতিশীল জীবিকা এবং উল্লেখযোগ্য আয় প্রদান করতে পারে। যারা নিজেদের খামার শুরু করতে চান, তাদের তিনি নিঃশর্ত পরামর্শ দেন। দুই বিঘা জমি থেকে মোট ৫,০০,০০০ টাকা (সুপারি থেকে ৩,০০,০০০ টাকা এবং লটকন থেকে ২,০০,০০০ টাকা) আয় সম্ভব।

এই ভিডিওটি সমন্বিত কৃষির একটি সফল মডেল তুলে ধরেছে, যা দেখায় যে আবেগ, কঠোর পরিশ্রম এবং কৌশলগত পরিকল্পনা কীভাবে উল্লেখযোগ্য কৃষি সাফল্যে নিয়ে যেতে পারে।