মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

বাগেরহাটে বাসমতী চাল চাষ: কামরুজ্জামান সোহেলের কৃষি বিপ্লব

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৮, ২০২৫, ০৩:৩৭ পিএম

বাগেরহাটে বাসমতী চাল চাষ: কামরুজ্জামান সোহেলের কৃষি বিপ্লব

বাগেরহাটে কামরুজ্জামান সোহেল তার শৈশবের কৃষি প্রেম এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা থেকে উচ্চ মূল্যের বাসমতী চাল চাষ শুরু করেছেন। সোহেল লক্ষ্য করেন যে, তার এলাকার ঐতিহ্যবাহী ধান চাষ খুব বেশি লাভজনক ছিল না, এবং কৃষকরা প্রায়শই তাদের নিজেদের চাহিদা মেটাতেও হিমশিম খেতেন। তিনি উচ্চ মূল্যের ধানের জাত চাষের লক্ষ্য নিয়ে "৫০ টাকার চাল থেকে ৫০০ টাকার চাল" এর দিকে যেতে চেয়েছিলেন। বাজারে প্রতি কেজি ৪৫-৫৩ টাকা মূল্যের বাসমতী ১১২১ জাতকে একটি লাভজনক বিকল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশ প্রতি বছর হাজার হাজার টন বাসমতী চাল আমদানি করে, এবং স্থানীয় চাষাবাদ আমদানি কমাতে, দেশের মধ্যে অর্থ রাখতে এবং কৃষকদের উপকৃত করতে পারে।

সোহেল তার ভাইয়ের মাধ্যমে ভারত থেকে বাসমতী ১১২১ জাতের বীজ সংগ্রহ করেন। হাইব্রিড ধানের মতো নয়, বাসমতী চাষে স্থানীয় ২৮ জাতের মতো প্রতি গুচ্ছে তিন থেকে চারটি চারা রোপণ করতে হয়। বাসমতী গাছের তীব্র সুগন্ধ প্রাথমিকভাবে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে, যারা আশঙ্কা করেছিলেন যে এটি কীটপতঙ্গ আকর্ষণ করবে। সুগন্ধের কারণে সম্ভাব্য কীটপতঙ্গের সমস্যা মোকাবিলায় সোহেল কীটনাশক স্প্রে করার ফ্রিকোয়েন্সি দ্বিগুণ করেন। প্রাথমিক চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে সারের অভাবের কারণে কিছু চিটা ধান ছিল। গাছগুলো লম্বা হয়, যা বাংলাদেশের ঝড়-বৃষ্টিতে একটি সমস্যা হতে পারে, তবে সোহেল বিশ্বাস করেন যে সঠিক সার প্রয়োগের মাধ্যমে এটি মোকাবেলা করা সম্ভব।

বিভাগীয় কর্মকর্তারা কাঁচা অবস্থায় প্রতি বিঘায় ৩৫ মণ (প্রায় ১৩০০ কেজি/একর) ফলন পরিমাপ করেছেন। সোহেল প্রতি বিঘায় ২৫ মণ শুকনো ফলন অনুমান করেন। তিনি দুই বিঘা জমি থেকে ১,০০,০০০ টাকা লাভের অনুমান করেছেন। বিপরীতে, ঐতিহ্যবাহী হাইব্রিড ধান চাষে প্রতি বিঘায় মাত্র ১৮০০-২০০০ টাকা লাভ হতো। সোহেল বাসমতী থেকে প্রতি বিঘায় ২৫,০০০ টাকা বা তার বেশি লাভের আশা করছেন। দুই বিঘা বাসমতী থেকে প্রায় ৭৫ মণ (কাঁচা) ফলন পাওয়া গেছে, যেখানে সাধারণ ধান থেকে ৮০-৯০ মণ পাওয়া যায়, তবে বাসমতীর দাম বেশি।

বাসমতী ১১২১ তার সুগন্ধ এবং স্বাদের জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত, যা উচ্চমানের হোটেল এবং বিরিয়ানি ও পোলাওয়ের জন্য জনপ্রিয়। সোহেলের প্রক্রিয়াজাত চালের চমৎকার সুগন্ধ এবং আকর্ষণীয় চেহারা রয়েছে। তিনি বন্ধুদের সাথে স্বাদ পরীক্ষা করেন, যারা বাণিজ্যিকভাবে কেনা বাসমতীর তুলনায় তার বাসমতীর উচ্চতর গুণমান এবং সুগন্ধ নিশ্চিত করেন।

সোহেলের সাফল্য খুলনা, যশোর এবং বাগেরহাটের কৃষকদের আকর্ষণ করেছে, যারা বাসমতী চাষে আগ্রহী। তিনি অন্যান্য কৃষকদের বাসমতী চাষে উৎসাহিত করছেন। একটি উদ্বেগ হলো যে, সোহেল যে বীজগুলো বংশবৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করছেন তা "মাতৃ বীজ" (মূল, প্রত্যয়িত বীজ) নয়, যা ভবিষ্যতের প্রজন্মের চাপ সহনশীলতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। সোহেল আশা করেন যে, উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষ এবং বিজ্ঞানীরা আরও গবেষণা পরিচালনা করবেন এবং এই বাসমতী জাতের দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা ও ব্যাপক প্রচলন নিশ্চিত করতে সহায়তা প্রদান করবেন। হরিপদ কাপালী এবং তার "হরিধানের" গল্পটি কৃষক-নেতৃত্বাধীন উদ্ভাবনের একটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে যা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভিডিওটি এই জোর দিয়ে শেষ করে যে, সোহেলের এই উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারে এবং বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে, যদি সঠিক যাচাই-বাছাই এবং গবেষণা থাকে।