জুলাই ২৮, ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
বর্তমানে ড্রাগন ফলের বাজার মূল্য কম, যা বছরের এই সময়ের জন্য স্বাভাবিক। এর কারণ হলো আম, লিচু, কাঁঠাল এবং আনারসের মতো অন্যান্য ফলের প্রাচুর্য। আম প্রতি কেজি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হলেও ড্রাগন ফল একটি "উচ্চ মূল্যের পণ্য"। মানুষ প্রথমে মৌসুমি ফলগুলোকে প্রাধান্য দেয়, কারণ ড্রাগন ফল অক্টোবর পর্যন্ত পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ড্রাগন ফলের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিবলু ভাইয়ের ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়ায় তিনি উত্তরবঙ্গের কৃষির সম্ভাবনা উপলব্ধি করেন। তিনি ড্রাগন ফলকে একটি "একচেটিয়া ভালো জিনিস," একটি "সুপারফুড," এবং "অত্যন্ত পুষ্টিকর" হিসেবে চিহ্নিত করেন, যার জনপ্রিয়তা ও চাহিদা বাংলাদেশে বাড়ছে।
খামারের ভেতরে রাস্তাগুলো ১৩-১৪ ফুট চওড়া, যাতে ফসল তোলার জন্য ট্রাক চলাচল করতে পারে। এখানে ভাইব্রেশন মেশিন দিয়ে তৈরি শক্তিশালী পাথরের খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা ২০ বছর স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণ মালচিং ব্যবহার করা হয়। একটি "দামি" আগাছা নিয়ন্ত্রণকারী মাদুর (উইড কন্ট্রোল মিডিয়া) পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা নিয়মিত মালচিংয়ের এক বছরের তুলনায় পাঁচ বছর স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই মাদুরটি পাঁচগুণ বেশি ব্যয়বহুল হলেও এটি আরও টেকসই এবং জলকে ধীরে ধীরে শিকড়ে প্রবেশ করতে দেয়।
একটি "বজ্রপাত প্রতিরোধক যন্ত্র" (লাইটনিং অ্যারেস্টার) স্থাপন করা হয়েছে, যা প্রায় ১.৫ থেকে ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কাজ করে। উত্তরবঙ্গ বজ্রপাতের প্রবণ এলাকা, এবং খোলা, সবুজ খামার বজ্রপাত আকর্ষণ করে। এটি প্রতিদিন কাজ করা ৫০-৬০ জন শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং ফসল রক্ষা করে। এই যন্ত্রটির জন্য ২,৮০,০০০ টাকা খরচ হয়েছে, এছাড়াও প্রকৌশলীদের জন্য অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয়েছে।
পুরো ৪৫ বিঘা জমি জুড়ে একটি বড় জাল দিয়ে ঢাকা হয়েছে। এটি পাখি, বাদুড় এবং কাঠবিড়ালি থেকে ফল রক্ষা করে, যারা মিষ্টি, লাল ফলের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করে। জালের কাঠামোর জন্য "হাই কার্বন তার" (সাত-প্লাই) ব্যবহার করা হয়েছে, যা ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে এবং রোদ ও বৃষ্টিতে মরিচা পড়া প্রতিরোধ করে।
ড্রাগন ফলের গাছের প্রত্যাশিত জীবনকাল ১৫-২০ বছর বলা হলেও, বাংলাদেশে এটি কার্যত ৮ বছর পর্যন্ত দেখা যায়। শিবলু ভাই ১৫ বছর পর্যন্ত ফলনের লক্ষ্য রেখেছেন। গাছের ফলন কমে গেলে নতুন চারা রোপণের জন্য গাছগুলোর মধ্যে ১৪ ইঞ্চি ফাঁকা স্থান রাখা হয়েছে। লাইন রোপণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যা একটি আধুনিক পদ্ধতি এবং এতে বেশি গাছ লাগানো যায়, পরিচর্যা সহজ হয় এবং সূর্যের আলো সমানভাবে পড়ে। লাইন রোপণ পদ্ধতিতে ফসল তোলাও সহজ।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ (মালচিং) অপরিহার্য কারণ ড্রাগন ফলের (একটি ক্যাকটাস প্রজাতি) অগভীর শিকড় রয়েছে এবং আগাছা গাছের জন্য নির্ধারিত পুষ্টি শোষণ করে। শিবলু ভাই নিশ্চিত করেন যে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রুত ছোট ড্রাগন ফলকে বড় করার জন্য "টনিক" বা "হরমোনাল পণ্য" ব্যবহার করে (যেমন ৭-৮ দিনে ৩০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম), যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রাকৃতিকভাবে, ড্রাগন ফলের ওজন ২৫০-৪০০ গ্রাম হয়। ফলগুলো যখন উপরের অংশ ফাটতে শুরু করে, তখন পরিপক্কতা নির্দেশ করে এবং তখন ফসল তোলা হয়। চরম তাপ বা অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ৪০% ফুল প্রাকৃতিকভাবে ঝরে যায়। ফুল না ঝরলে প্রতি মৌসুমে প্রতি গাছে প্রায় ১৫টি ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। বর্তমানে, শুধুমাত্র মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ব্যবহার করা হয়; পরাগায়নের জন্য মৌমাছির উপস্থিতি এবং রপ্তানির পরিকল্পনার কারণে কোনো কীটনাশক বা পোকামাকড়নাশক ব্যবহার করা হয় না। বিশাল আকারের (৯০,০০০ গাছ) কারণে প্রাকৃতিক পরাগায়নের জন্য মৌমাছি ব্যবহার করা হয়, কারণ ম্যানুয়াল পরাগায়ন সম্ভব নয়।
বৃষ্টির মৌসুমে কর্মীদের রেইনকোট এবং গামবুট সরবরাহ করা হয়। বৃষ্টির মধ্যেও ফসল তোলা চলতে থাকে। জল-অদ্রবণীয় সার (যেমন শুকনো মাছের গুঁড়ো, খৈল, পটাশ, টিএসপি, সরিষার খৈল, বাদামের খৈল, ডিমের খোসা) হালকা বৃষ্টির সময় প্রয়োগ করা হয় যাতে শোষণ নিশ্চিত হয়। বৃষ্টির সময় ছত্রাকনাশকের সাথে একটি "প্রোমোটার" (জৈব আঠালো পদার্থ) ব্যবহার করা হয় যাতে সেগুলো গাছে লেগে থাকে।
নমুনা পাঠানো হয়েছে এবং অনুমোদনও পাওয়া গেছে। যদি ভালো দাম পাওয়া যায় তবে রপ্তানি করা হবে; অন্যথায়, তারা দেশীয় বাজারে বিক্রি করবে। খামারটি ৯০% জৈব পদ্ধতি অনুসরণ করে রপ্তানি গুণগত মান বজায় রাখে, কারণ বিদেশী ক্রেতারা পরিদর্শন করেন এবং স্বাস্থ্যবিধি ও গুণগত মানের কঠোর অনুসরণ দাবি করেন। খামারে প্রায় ৪০-৫০ জন লোক কাজ করে, যার মধ্যে একটি মহিলা দলও রয়েছে। বৃষ্টির সময় পুরুষরা প্রধানত কাজ করে, বিশেষ করে ফসল তোলার জন্য।
আপনার মতামত লিখুন: