জুলাই ২০, ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম
আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি ঘিরে সংঘটিত সংঘর্ষ ও সহিংসতায় নিহতের ঘটনায় আরও চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত শনিবার (১৯ জুলাই) রাতে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৫ হাজার ৪শ জনকে আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় পৃথক এই চারটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এর মাধ্যমে চলমান এই ঘটনায় মামলার সংখ্যা এবং আসামির তালিকা আরও দীর্ঘ হলো।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘর্ষ ও সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মোট ৫ জন নিহত হন। নতুন দায়ের করা মামলাগুলো নিহতদের কেন্দ্র করে। নিহতরা হলেন—শহরের উদয়ন রোডের দীপ্ত সাহা (২৫), টুঙ্গিপাড়ার সোহেল রানা মোল্লা (৩০), বিসিক এলাকার রমজান কাজী (১৭) এবং সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার বেপারীপাড়ার ইমন তালুকদার (১৭)। এছাড়া, ১৮ জুলাই (শুক্রবার) রাতে সহিংসতার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহরের থানাপাড়ার রমজান মুন্সি (৩৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান, যা নিহতের সংখ্যা বাড়িয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, নিহত দীপ্ত সাহার পক্ষে গোপালগঞ্জ সদর থানার এসআই শামীম হোসেন, সোহেল রানার পক্ষে এসআই আবুল কালাম আজাদ, রমজান কাজীর পক্ষে এসআই আইয়ুব আলী ও ইমন তালুকদারের পক্ষে এসআই শেখ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে পৃথক চারটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এই চারটি মামলার মধ্যে তিনটিতে প্রত্যেকটিতে অজ্ঞাত ১ হাজার ৪শ থেকে ১ হাজার ৫শ জন এবং অন্য একটি মামলায় অজ্ঞাত ৮শ-৯শ জনকে আসামি করা হয়েছে, যা মোট আসামির সংখ্যা ৫ হাজার ৪শ জনে দাঁড় করিয়েছে।
এদিকে, পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে। শনিবার রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ ৯ জন এবং কোটালীপাড়া থানা পুলিশ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের রোববার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান এবং কোটালীপাড়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ পর্যন্ত জেলায় মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২১ জন।
গভীর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে ঘিরে এই সংঘর্ষ ও সহিংসতায় গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ এবং নিহতের ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৮ হাজার ৪০৮ জন, যার মধ্যে ৩৫৮ জন এজাহারনামীয় আসামি। এই বিশাল সংখ্যক আসামির তালিকা ঘটনার ব্যাপকতা এবং সংঘটিত ক্ষতির পরিমাণ নির্দেশ করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত রোববার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। জরুরি অবস্থার মধ্যেও গোপালগঞ্জ থেকে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। শহরের মধ্যে বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে রিকশা, ভ্যান ও অটোরিকশা চলাচল করলেও যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। জেলায় কোথাও সভা, সমাবেশ বা জরুরি অবস্থা ভঙ্গের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া, জরুরি অবস্থার আওতামুক্ত থাকায় শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে এইচএসসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত অনার্স পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছে। কাঁচাবাজার, ফার্মেসি, মুদিমাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা থাকলেও অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এই পরিস্থিতি গোপালগঞ্জের জনজীবনে অস্থিরতার একটি চিত্র তুলে ধরে।
আপনার মতামত লিখুন: