সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২

গাইবান্ধায় রাতের আঁধারে কবর থেকে কঙ্কাল চুরি, আতঙ্কে গ্রামবাসীর রাত জেগে পাহারা

মোস্তাফিজুর রহমান

আগস্ট ২৫, ২০২৫, ০৬:৫৭ পিএম

গাইবান্ধায় রাতের আঁধারে কবর থেকে কঙ্কাল চুরি, আতঙ্কে গ্রামবাসীর রাত জেগে পাহারা

ছবি-দিনাজপুর টিভি

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নে কবরস্থান থেকে রাতের আঁধারে একের পর এক কঙ্কাল চুরির ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত কয়েক দিনে ৩০টিরও বেশি কবর থেকে কঙ্কাল চুরি হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে চুরি ঠেকাতে এবং নিজেদের পারিবারিক কবরস্থান রক্ষার জন্য গ্রামবাসী এখন রাত জেগে পালা করে পাহারা দিচ্ছেন।

সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে কয়েকটি কবর খোঁড়া অবস্থায় দেখতে পাওয়ার পর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে, যা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কচুয়া, সরদারপাড়া, আগড়াপাড়া, পূর্ব কচুয়া, পাঠানপাড়া ও তালপট্টি গ্রামের বিভিন্ন পারিবারিক কবরস্থানের কঙ্কাল চুরি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা রাতের অন্ধকারে কবর খুঁড়ে কঙ্কাল চুরি করছে। সরদারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছদরুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "সম্প্রতি আমার মা মারা গেছেন। আজ সকালে দেখি কবর খোঁড়া, কাফনের কাপড় পড়ে আছে, কিন্তু মায়ের কঙ্কাল নেই। এই কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।"

একইভাবে, মানিকগঞ্জ গ্রামের রেজওয়ানুল হক জানান, কয়েক মাস আগে দাফন করা তার এক আত্মীয়ের কবর থেকেও কঙ্কাল চুরি হয়েছে। কচুয়া ইউনিয়নের শামিম মিয়া বলেন, তাদের পারিবারিক কবরস্থান থেকে একসঙ্গে তিনটি কঙ্কাল চুরি হয়েছে।

এই ঘটনায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আজহার আলী। তিনি বলেন, "প্রতিদিনই কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটছে। এই কঙ্কালগুলো হয়তো বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।"

কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খন্দকারও কঙ্কাল চুরির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, "প্রতিদিনই এ বিষয়ে ফোন পাচ্ছি। স্থানীয়রা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান হবে না।"

এ বিষয়ে সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলম জানান, কঙ্কাল চুরির বিষয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসছে, তবে এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। তিনি বলেন, "লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় গ্রামবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।