সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ১০:৫৬ পিএম
গত এক বছরে স্বর্ণের দাম প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেড়েছে এবং প্রতি আউন্স তিন হাজার ৫৫০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন। এই প্রবণতার কারণে বিশ্বজুড়ে স্বর্ণের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্ববাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করছেন।
অস্ট্রেলিয়ার কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারারের মতে, শেয়ারের তুলনায় স্বর্ণের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে। তাই অনিশ্চয়তার সময় এটি ব্যবসায়ীদের ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে। এছাড়া, সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা না রাখা বিনিয়োগকারীরাও সোনা পছন্দ করেন, কারণ এটি একটি বাস্তব সম্পদ যা নিজের কাছে সংরক্ষণ করা যায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এবং ফেডারেল রিজার্ভের ওপর তার চাপ স্বর্ণের দাম বাড়ানোর পেছনে একটি বড় কারণ। ট্রাম্পের 'লিবারেশন ডে' শুল্ক আরোপের ঘোষণা বৈশ্বিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে, যার ফলে স্বর্ণের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়।
এছাড়াও, ট্রাম্প বারবার ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার কমাতে চাপ দিচ্ছেন, যা স্বর্ণকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। কারণ, সুদের হার কমলে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো সুদযুক্ত সম্পদ থেকে আয় কমে যায়, তখন সোনা রাখা তুলনামূলকভাবে বেশি লাভজনক হয়।
মার্কিন ডলারের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক অস্থিরতাও স্বর্ণের বাজারকে প্রভাবিত করছে। ব্রিটিশ পাউন্ড এবং জাপানি ইয়েনের মতো মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ কিনছেন।
এছাড়া, কিছু দেশ ডলারের পরিবর্তে স্বর্ণে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করতে চাইছে, যা স্বর্ণের চাহিদা ও দাম উভয়ই বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি অনেক সরকারের কাছে মার্কিন ডলারকে আগের মতো নিরাপদ মনে হচ্ছে না।
স্বর্ণে বিনিয়োগের দুটি প্রধান উপায় রয়েছে: ১. সরাসরি ক্রয়: স্বর্ণের বার, মুদ্রা বা গয়না কেনা। ২. আর্থিক পণ্য: ফিউচার্স বা বিনিয়োগ তহবিলের মাধ্যমে বেচাকেনা।
যদিও ব্যক্তি পর্যায়ে সরাসরি স্বর্ণ কেনা সহজ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত আর্থিক পণ্য ব্যবহার করে, কারণ এতে তাদের প্রচুর স্বর্ণ সংরক্ষণ করতে হয় না।