জুলাই ২৫, ২০২৫, ১০:৪৯ এএম
ফ্রান্স আগামী সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ। শিল্পোন্নত সাতটি দেশের জোট (জি-সেভেন) এর প্রথম কোনো সদস্য দেশ হিসেবে ফ্রান্স এই স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। ম্যাক্রঁ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণপরিষদের অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি ঘোষণা করা হবে।
ম্যাক্রঁ তার পোস্টে গাজার বর্তমান পরিস্থিতির ওপর জোর দিয়ে লিখেছেন, "আজকের জরুরি প্রয়োজন হলো গাজায় যুদ্ধের অবসান এবং বেসামরিক জনগণকে উদ্ধার করা। শান্তি সম্ভব। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, সব জিম্মির মুক্তি এবং গাজার জনগণের জন্য ব্যাপক মানবিক সহায়তা প্রয়োজন আমাদের।"
বৃহস্পতিবারের পোস্টে ম্যাক্রঁ আরও উল্লেখ করেছেন, "মধ্যপ্রাচ্যে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির জন্য ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতির প্রতি সততার দিক থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।" তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কাছে পাঠানো একটি চিঠির ছবিও যুক্ত করেছেন, যেখানে তার এই সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ম্যাক্রঁর মতে, "আমাদের অবশ্যই হামাসের নিরস্ত্রীকরণের নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং গাজাকে সুরক্ষিত ও পুনর্নির্মাণ করতে হবে।" তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার এবং এর নিরস্ত্রীকরণ ও ইসরায়েলকে সম্পূর্ণরূপে স্বীকৃতি দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন, যা মধ্যপ্রাচ্যের সবার নিরাপত্তায় অবদান রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা ম্যাক্রঁর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে মাহমুদ আব্বাসের ডেপুটি হুসেইন আল-শেখ বলেছেন, "(ম্যাক্রঁর) এই অবস্থান আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতি এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থনকে প্রতিফলিত করে।"
অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ম্যাক্রঁর সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রসঙ্গ টেনে এক্স-এ এক পোস্টে লিখেছেন, "৭ অক্টোবরের বেপরোয়া হত্যাকাণ্ডের পর তেল আভিভের পাশে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে ম্যাক্রঁর সিদ্ধান্তের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।" নেতানিয়াহু আরও দাবি করেন, "এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার জন্য একটি লঞ্চ প্যাড হবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র, এর পাশে শান্তিতে বসবাস করার জায়গা নয়।" তার মতে, "ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের পাশে একটি রাষ্ট্র চায় না, তারা ইসরায়েলের পরিবর্তে একটি রাষ্ট্র চায়।"
হামাস ফ্রান্সের সিদ্ধান্তকে "সঠিক দিকের ইতিবাচক পদক্ষেপ" বলে অভিহিত করেছে এবং বিশ্বের সব দেশকে "ফ্রান্সের নেতৃত্ব অনুসরণ করার" আহ্বান জানিয়েছে।
বর্তমানে, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্পেন ও আয়ারল্যান্ডসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশও এর অন্তর্ভুক্ত। তবে ইসরায়েলের প্রধান সমর্থক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ তার মিত্ররা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেছেন যে তিনি শুক্রবার ফরাসি এবং জার্মান নেতাদের সাথে "জরুরি আলাপ" করবেন এবং "হত্যা বন্ধে জরুরিভাবে কী করা যায়" তা নিয়ে আলোচনা করবেন। স্টারমার আরও বলেন, রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ফিলিস্তিনি জনগণের একটি "অবিচ্ছেদ্য অধিকার" এবং যুদ্ধবিরতি "আমাদের একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের স্বীকৃতির পথে নিয়ে যাবে।"
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফ্রান্সের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে বলেছে যে এটি "ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐকমত্যের বিষয়টিই আবার নিশ্চিত করছে।"
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় একটি অভিযান শুরু করে, যে হামলায় প্রায় ১২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, তখন থেকে শুরু করে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৫৯ হাজার ১০৬ জন নিহত হয়েছে এবং গাজার বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে যে গাজা শহরের প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন এখন অপুষ্টিতে ভুগছে এবং প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ১০০ টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এবং মানবাধিকার গোষ্ঠী গাজা উপত্যকায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করেছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সব ধরনের জিনিস সরবরাহের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েল বারবার বলেছে যে কোনো অবরোধ নেই এবং অপুষ্টির যেকোনো ঘটনার জন্য হামাসকে দায়ী করছে তারা।
সুত্রঃ বিবিসি
আপনার মতামত লিখুন: