রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

দ্বিতীয় দিনে সংঘাত, থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের অভিযোগ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৫, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম

দ্বিতীয় দিনে সংঘাত, থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের অভিযোগ

ছবি- সংগৃহীত

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ এবার ভয়াবহ সামরিক সংঘাতে রূপ নিয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাবর্ষণ ও বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই কম্বোডিয়া অভিযোগ করেছে, থাই সামরিক বাহিনী আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করছে, যা যুদ্ধাপরাধের শামিল।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই থাই বিমান বাহিনীর এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কম্বোডিয়ার সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালায়। থাইল্যান্ডের অভিযোগ, কম্বোডিয়া কামানসহ ভারী অস্ত্র দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করছে। পাল্টা হামলায় কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, থাই সেনাবাহিনী ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করে তাদের ৭টি স্থানে হামলা চালিয়েছে। কম্বোডিয়া এই হামলাকে 'নির্বিচার ও বর্বর সামরিক আগ্রাসন' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফট্যানেন্ট জেনারেল মালি সোচেটা জানান, থাই সেনাবাহিনী ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে খলোচ এলাকায় ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। এরপর ফ্নম খমোচ, তা মোন, তা ক্রাবেই মন্দির এবং মোম ৩ সহ আরও কয়েকটি স্থানে ক্লাস্টার বোমা দিয়ে হামলা চালানো হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ক্লাস্টার বোমা আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা নিষিদ্ধ এবং এর ব্যবহার যুদ্ধাপরাধ।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে 'কনভেনশন অন ক্লাস্টার মিউনিশন' নামে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়, যা ক্লাস্টার বোমার সংরক্ষণ, পরিবহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। যদিও ১১১টি দেশ ও ১২টি সংস্থা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, তবে থাইল্যান্ড এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।

সংঘাতে এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষে বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক ও সেনাসদস্য নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের ১৫ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১৪ জনই বেসামরিক নাগরিক। কম্বোডিয়ায় একজন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। থাইল্যান্ডের চারটি সীমান্ত প্রদেশ থেকে এক লাখেরও বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে থাইল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। কম্বোডিয়া থেকেও ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ সীমান্ত এলাকা ছেড়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে বহু বছর ধরেই জমি নির্ধারণের বিরোধ চলছে। বিশেষ করে প্রিয়া বিহার মন্দিরকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রায়শই চরমে পৌঁছায়। ২০১১ সালে এক সপ্তাহব্যাপী কামান বিনিময়ে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। সম্প্রতি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে থাই সেনাসদস্য আহত হওয়া এবং মাইন বহনের একটি ভিডিও প্রকাশের পর নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। থাইল্যান্ডের অভিযোগ, কম্বোডিয়ার সেনারা নতুন করে প্রায় ১০০টি মাইন পুঁতেছিল।

এই সংঘাত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, যিনি বর্তমানে আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের (ASEAN) চেয়ারপার্সন, উভয় দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (UN Security Council) নিউইয়র্কে জরুরি বৈঠক ডেকেছে চলমান সীমান্ত সংঘাত নিয়ে আলোচনার জন্য। থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেছেন, সীমান্ত সংঘাত 'যুদ্ধে' রূপ নিতে পারে।