জুলাই ২২, ২০২৫, ০৪:২৭ পিএম
এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের রাত ৩টায় আকস্মিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সচিবালয়ে প্রবেশ করে গাড়ি ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশের লাঠিপেটায় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। সোমবার (২২ জুলাই) বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে এই ঘটনা ঘটে, যা সচিবালয় প্রাঙ্গণে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
গত ২১ জুলাই উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ২৬ জন শিশুসহ ২৭ জন নিহত হন। এই মর্মান্তিক ঘটনার পরদিনই (২২ জুলাই) এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। প্রথমে পরীক্ষা বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও, মধ্যরাতে হঠাৎ করে রাত ৩টায় পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা আসে। এই দায়িত্বহীন ও বিশৃঙ্খল সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাদের অভিযোগ, এমন একটি দুঃখজনক ঘটনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, বরং মধ্যরাতে সিদ্ধান্ত জানানোয় অনেক শিক্ষার্থী সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক ধকলের কারণ হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, "গতকাল বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন কলেজের অনেক শিক্ষার্থী মারা গেছে। এমন দুঃখজনক ঘটনার পরও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়নি। হঠাৎ করে রাত ৩টার সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সকালে পরীক্ষা দিতে বের হয়ে জানতে পারি পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। এমন দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তের জন্য আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ চাই।"
সোমবার দুপুর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা, যার মধ্যে সেনাবাহিনী ও পুলিশও ছিল, সেখানে মোতায়েন করা হয়। কিন্তু একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধাক্কায় সচিবালয়ের গেট খুলে যায় এবং তারা ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরে ঢুকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে অবস্থানরত বেশ কয়েকটি সরকারি গাড়ির কাঁচ ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত অ্যাকশনে যান এবং শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
এই ঘটনার পর সচিবালয় প্রাঙ্গণে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অপ্রত্যাশিত এই হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা সরকারের উচ্চ মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। শিক্ষার্থীদের এমন চরম পদক্ষেপ অপ্রত্যাশিত হলেও, তাদের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখছেন অনেকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল এমন একটি সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে আরও দ্রুত এবং সুসংগঠিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ধরনের প্রতিক্রিয়া এড়াতে পারত। এই ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং শিক্ষার্থী আন্দোলনের ধরন নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে।
আপনার মতামত লিখুন: