সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ১০:২৫ এএম
সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জেরার মুখে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে হত্যাকাণ্ড-সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। এই জবানবন্দিতে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, যা দেশের রাজনৈতিক ও আইনি অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
জেরার এক পর্যায়ে সাবেক আইজিপি মামুন বলেছেন যে, তিনি তার দায়িত্বে অবহেলা করেছেন এবং এ কারণেই দোষ স্বীকার করেছেন। তিনি আরও জানান, সরকারের কোনো অবৈধ নির্দেশনা মানতে পুলিশ বাধ্য নয়। র্যাবের মহাপরিচালক থাকাকালে বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনায় তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে স্বীকার করেছেন।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ আক্রান্ত হলে সেই মাত্রা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে, এর বেশি নয়। তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যা বৈধ নয় বলে মন্তব্য করেন এবং স্বীকার করেন যে, তিনি জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত অপরাধের অংশীদার।
মামুন জানান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসায় অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হতো, যা চেইন অব কমান্ড ভেঙে ঘটতো। তিনি এসব বৈঠকে থাকতেন না এবং তাকে জানানোও হতো না। তবে এসব বৈঠকের নেতৃত্ব আসাদুজ্জামান খান কামাল দিতেন বলে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
এছাড়া, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হেলিকপ্টার, ড্রোন বা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়েও মন্তব্য করেছেন, যদিও লিখিত কোনো নির্দেশনা পাননি।
জেরার সময় আইনজীবী জানতে চান, 'পুলিশে এত অন্যায়-অনিয়মের পরও পদত্যাগের তাড়না তৈরি হয়নি? কারণ আপনি সুবিধাভোগী।' জবাবে মামুন বলেন, 'আমি পদত্যাগ করিনি। তবে সুবিধাভোগী ছিলাম না।' তিনি জানান, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে অবদানের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পদক দেওয়া হয়, তবে তার পাওয়া পদকটি ওই নির্বাচনের কারণে কিনা, তা তিনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি।
ট্রাইব্যুনাল আগামী সোমবার তার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছেন। এই মামলার আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রয়েছেন।