সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ০৪:২৭ পিএম
দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাকে জাতীয় ক্লিনিক্যাল গাইডলাইনে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী একটি কর্মশালায় এই আহ্বান জানানো হয়। 'বাংলাদেশে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকার ভূমিকা: ভবিষ্যৎ পথ নির্দেশনা' শীর্ষক এই কর্মশালায় আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআর,বি যৌথভাবে আয়োজন করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষকে গুরুতর অসুস্থ করে তোলে এবং প্রায় ৬.৫ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। বাংলাদেশেও এই রোগ এখন একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। সম্প্রতি দেশের ১৯টি হাসপাতালে পরিচালিত একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, জ্বর-কাশিতে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৫৯ শতাংশই ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী নারী, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ইনফ্লুয়েঞ্জার ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের জন্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে টিকা নেওয়া হলে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।
কর্মশালায় উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের প্রধান বাধাগুলো চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হলো—সচেতনতার অভাব, টিকার সীমিত প্রাপ্যতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়, কোল্ড চেইন ব্যবস্থাপনার সমস্যা এবং একটি স্পষ্ট জাতীয় নীতির অভাব। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা টিকা সহজলভ্য করা, এর মূল্য কমানো এবং গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণার ওপর জোর দেন।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, "আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসেই ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। তাই ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে টিকা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।" আইসিডিডিআর,বি-র সহকারী বিজ্ঞানী ডা. ফাহমিদা চৌধুরী জানান, বিশেষজ্ঞরা এই কার্যক্রমের প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে টেকসই সমাধানে সুপারিশ দিয়েছেন। প্যানেল সদস্যরা উল্লেখ করেন যে, আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে আসতে পারে, তাই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য দেশের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একটি টেকসই টিকাদান কর্মসূচি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।