সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ০৫:৩৬ পিএম
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বস্তায় আদা চাষ। প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে এই পদ্ধতিতে খরচ ও পরিশ্রম দুটোই কম, কিন্তু লাভের পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় এখানকার কৃষকেরা এখন এই পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন। চলতি বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় কৃষি অফিস কৃষকদের ৭ হাজার ৫০০ বস্তার প্রদর্শনী প্লট দিয়েছে এবং বাকি ৭ হাজার ৫০০ বস্তা কৃষকরা নিজ উদ্যোগে করেছেন।
গত বছর শ্রীমঙ্গলে ১২ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছিল, আর ২০২৩ সালে প্রথম বছরে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ হাজার বস্তা। এই বছর কৃষি বিভাগ আশা করছে যে, বস্তা থেকে প্রায় ১২ হাজার কেজি আদা উৎপাদিত হবে, যার বাজার মূল্য হতে পারে প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
প্রদর্শনী প্লটের জন্য কৃষকদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বস্তা, বীজ, সার এবং কীটনাশক সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া, যারা নিজ উদ্যোগে চাষ করছেন, তাদের সার্বিক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। উপজেলার কালাপুর, মাজদিহি, টিকরিয়া, সুনগইড়, রামনগর, পরেরটং, মোহাজেরাবাদ, দিলবরনগর, খলিলপুর, লাহারপুর, বনগাত্তঁ, চিড়িগাত্তঁ, গন্ধবপুর, রাজপাড়া, পাত্রিকুল ও ডলুছড়া গ্রামের কৃষকরা এই পদ্ধতিতে আদা চাষ করছেন।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এপ্রিল-মে মাসে বস্তায় আদা রোপণ করতে হয়। রোপণের প্রায় ১৫-২০ দিন আগে মাটি প্রস্তুত করতে হয় এবং এর সাথে গ্যাস মুক্ত গোবর, ভার্মি কম্পোস্ট, ছাই, সার ও কীটনাশক মেশাতে হয়। আদার ভালো ফলনের জন্য রোপণের ৫০, ৮০ এবং ১১০ দিন বয়সে প্রতি বস্তায় পরিমাণ মতো পটাশ ও ইউরিয়া সার মিশিয়ে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করা জরুরি। পাশাপাশি গাছে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে বস্তা থেকে আদা তোলা যায়। জাতভেদে প্রতি বস্তায় প্রায় ১ কেজি আদা উৎপাদিত হয়, যেখানে প্রতি বস্তায় খরচ হয় মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। প্রতি কেজি আদার বাজার মূল্য ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
কৃষক মুক্তার হোসেন জানান, তিনি এ বছর ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন এবং ভালো ফলনের ব্যাপারে আশাবাদী। গত বছর তিনি ১ হাজার ২০০ বস্তা থেকে ৭০০ কেজি আদা পেয়েছিলেন। উৎপাদিত আদা থেকে কৃষি অফিস বীজ সংগ্রহের জন্য ১৫০ টাকা কেজি দরে ৩০০ কেজি আদা কিনে নেয় এবং বাকি আদা বাজারে বিক্রি করে ভালো লাভ হয় তার।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুকুর রহমান জানান, কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। তারা চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রদান করছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, 'বস্তায় আদা চাষ একটি অত্যন্ত লাভজনক পদ্ধতি। পতিত জমি, বাড়ির ছাদ বা উঠান ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে কম খরচে ভালো ফলন পাওয়া যায় এবং রোগবালাইয়ের আক্রমণও কম হয়। শ্রীমঙ্গলে বস্তায় আদা চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং আমরা কৃষকদের এ বিষয়ে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করছি।'
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বস্তায় আদা চাষ কৃষকদের মধ্যে নতুন আগ্রহ তৈরি করেছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় কৃষকরা এখন পতিত জমি ও বাড়ির ছাদেও আদা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।