আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৮:৪৭ পিএম
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও কৃষকের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশে প্রথমবারের মতো কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সবজির মিনি কোল্ডস্টোরেজ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) সারাদেশে ১০০টি ফারমার্স মিনি কোল্ড স্টোরেজ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই উদ্যোগকে দেশের কৃষি খাতে এক নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা কৃষিপণ্যের অপচয় কমানো এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এই যুগান্তকারী প্রকল্পটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মেদুলিয়া সমন্বিত কৃষক উন্নয়ন সংঘের কাছে প্রথম মিনি কোল্ড স্টোরেজের চাবি হস্তান্তর করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, “আজকের এই উদ্যোগ শুধু একটি যন্ত্র বিতরণ নয়, বরং কৃষি খাতে এক নতুন যুগের সূচনা। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকরা মৌসুমি সবজির ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবেন না।”
প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, এই মিনি কোল্ড স্টোরেজগুলো পুরোপুরি কৃষকবান্ধব এবং বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। এতে স্থানীয় ও আমেরিকান হাই-টেক ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে। এটি সোলারচালিত হওয়ায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে পরিচালিত এই প্রযুক্তি তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি ইন্টারনেট-ভিত্তিক হওয়ায় কৃষক তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই ঘরে বসে পণ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ঘরভিত্তিক এবং কনটেইনারভিত্তিক দুটি মডেলের এই কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করা হয়েছে, যার ধারণক্ষমতা যথাক্রমে ১০ টন ও খরচ প্রায় ৫ লাখ টাকা এবং ১৫ লাখ টাকা। এটি প্রচলিত কোল্ড স্টোরেজের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ কম খরচে তৈরি করা সম্ভব।
গত শীতের মৌসুমে সবজির দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের ব্যাপক লোকসান হয়েছিল। তখন প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শে কৃষি মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ নেয়। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে সাভারের রাজালাখ হর্টিকালচার সেন্টারে এটি স্থাপন করে আট মাস ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। এই প্রকল্পের পরিচালক তালহা জুবাইর মাসরুর বলেন, "দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের কৃষকরা অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই প্রযুক্তি কৃষকের ঘরেই স্থাপন করা সম্ভব, যা ফসলের অপচয় কমিয়ে কৃষকের আয় বৃদ্ধি করবে।"
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, বাংলাদেশ এখন উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো ফসল সংরক্ষণ ও বাজার ব্যবস্থাপনা আধুনিক করা। সোলারভিত্তিক ও মোবাইল অ্যাপ নিয়ন্ত্রিত এই মিনি কোল্ড স্টোরেজ কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। পরিবেশগত দিক থেকেও এটি অত্যন্ত উপকারী, কারণ এটি বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমায়। এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।