শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

এক মাসে ১০০ জেলে নিখোঁজ, নাফ নদীর আতঙ্ক

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ০৪:৩৬ পিএম

এক মাসে ১০০ জেলে নিখোঁজ, নাফ নদীর আতঙ্ক

ছবি - সংগৃহীত

মিয়ানমার সীমান্তবর্তী নাফ নদী এবং বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চল বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তৎপর বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)-এর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির ফলে গত এক মাসে প্রায় ১০০ জন বাংলাদেশি জেলে নিখোঁজ হয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে।

স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, আরাকান আর্মির সদস্যরা স্পিডবোটে টহল দিয়ে জেলেদের অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে এবং মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করছে।

গত ২৬ আগস্ট টেকনাফের নাইখংদিয়া এলাকা থেকে ১১ জন জেলেকে দুটি ট্রলারসহ আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে। শুধুমাত্র আগস্ট মাসেই তারা ৬৩ জন জেলে এবং ১০টি ট্রলার অপহরণ করেছে বলে মালিকপক্ষ জানিয়েছে।

এই ধরনের তৎপরতা ঠেকাতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের টহল জোরদার করেছে। গত ২৯ আগস্ট কোস্টগার্ড ১৯টি ট্রলারসহ ১২২ জন জেলেকে উদ্ধার করেছে, যাদের মধ্যে ২৯ জন বাংলাদেশি এবং ৯৩ জন রোহিঙ্গা ছিল।

আরাকান আর্মির তৎপরতা কেবল জেলে অপহরণেই সীমাবদ্ধ নয়। সীমান্তে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত ২৭ আগস্ট টেকনাফের খরের দ্বীপ এলাকায় বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া, আরাকান আর্মির সদস্য হিসেবে চিহ্নিত একজন তরুণ একে-৪৭ রাইফেলসহ আত্মসমর্পণ করেছে। বিজিবি জানিয়েছে, গত এক বছরে সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় ১,৩২১ কোটি টাকার মাদক জব্দ করা হয়েছে, যা এই অঞ্চলে অপরাধ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

আরাকান আর্মির কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশও বেড়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। আরাকান আর্মি একদিকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, অন্যদিকে টাকার বিনিময়ে তাদের বাংলাদেশে প্রবেশে সহায়তা করছে।

এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগণ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। কক্সবাজার বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোনো সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে দেওয়া হবে না এবং সীমান্ত সুরক্ষায় তারা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কূটনৈতিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এই সংকট সমাধান করা কঠিন হবে।