সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ১১:০৮ এএম
গত ১৬ বছরে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের অপরিকল্পিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্পের কারণে সারাদেশে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অনেক সরকারি ভবন এখন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব ভবন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে, যা সরকারের জন্য একটি বড় আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যেন 'সরকারি মাল, দরিয়া মে ঢাল'-এর বাস্তব উদাহরণ।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমন অনেক ভবন রয়েছে:
-
পারকী সমুদ্রসৈকতের রাজকীয় অতিথিশালা: চট্টগ্রামের পারকী সমুদ্রসৈকতের পাশে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২ একর জায়গায় নির্মিত এই অতিথিশালাটি এক বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি। প্রতি মাসে এর রক্ষণাবেক্ষণে ১৫ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে।
-
নেত্রকোনার শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র: ৩৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই কেন্দ্রটি দুই বছর আগে উদ্বোধন হলেও কোনো সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হয়নি। প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য খাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
-
মেহেরপুরের আধুনিক হাসপাতাল: ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি ২০২৩ সালে উদ্বোধন করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না।
-
ছাতকের অডিটোরিয়াম: সুনামগঞ্জের ছাতকে ১৩ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নির্মিত অডিটোরিয়ামটি দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
-
খাগড়াছড়ির তিন ছাত্রাবাস: খাগড়াছড়িতে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হলেও ১৪ বছর ধরে সেগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি।
এই ধরনের অপরিকল্পিত প্রকল্পগুলো মূলত ব্যক্তিস্বার্থে এবং দুর্নীতির উদ্দেশ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে কিছু আমলা, রাজনীতিবিদ এবং ঠিকাদারের একটি সিন্ডিকেট বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
বর্তমানে এসব ভবনে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে, আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে এবং দরজা-জানালা চুরি হয়ে যাচ্ছে।
এসব স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমানো এবং জনকল্যাণে ব্যবহারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানান, তারা ভালো উদ্যোক্তা খুঁজে বের করে পারকী অতিথিশালাটি পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
তবে এই ধরনের অব্যবস্থাপনা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে এবং সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধ করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।