মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

গীবত: এক জঘন্য অপরাধ ও এর ভয়াবহ পরিণতি, ইসলাম কী বলে?

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২১, ২০২৫, ০১:২৯ পিএম

গীবত: এক জঘন্য অপরাধ ও এর ভয়াবহ পরিণতি, ইসলাম কী বলে?

ছবি- সংগৃহীত

পবিত্র কোরআনে কারিমে মহান আল্লাহ তায়ালা গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। সূরা হুজুরাতের ১২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, "তোমাদের একে অন্যের গীবত করবে না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? এটাকে তো তোমরা ঘৃণা করে থাক। তোমরা আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।" এই আয়াতে গীবতের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করা হয়েছে এবং মুমিনদের একে অপরের প্রতি সম্মান বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মাঠ পর্যায়ের তথ্যানুযায়ী, হাদিস শরিফে গীবতের সুনির্দিষ্ট পরিচয় দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার সাহাবীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, "তোমরা কি জানো গীবত কাকে বলে?" সাহাবীরা উত্তর দিলেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, "গীবত হলো তোমার ভাই সম্পর্কে তোমার এমন কোনো আলোচনা করা, যা সে শুনলে অপছন্দ করবে।" তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আমি আমার ভাই সম্পর্কে যা বলছি তা যদি তার মধ্যে থাকে তবুও কি আপনি গীবত মনে করেন? তিনি বলেন, "তুমি যা বললে বাস্তবে তা যদি তার মধ্যে থেকেও থাকে, তাহলে অবশ্যই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তুমি যা বললে তা তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে।" (মুসলিম, হাদিস: ৩২২)। এই হাদিস থেকে স্পষ্ট হয় যে, কারও অনুপস্থিতিতে তার এমন কোনো দোষ আলোচনা করা, যা শুনলে সে মনে কষ্ট পাবে, সেটাই গীবত। এই দোষ শারীরিক, মানসিক, চারিত্রিক, অর্থনৈতিক বা যেকোনো বিষয়েই হতে পারে। এমনকি ইশারা-ইঙ্গিত, চোখ বা হাতের মাধ্যমেও গীবত প্রকাশ পেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অসন্তুষ্টিমূলক কোনো বিষয়ে কারও অনুপস্থিতিতে অন্যের কাছে উল্লেখ করাই হলো গীবত। আর যদি কারও দোষের কথা তার সামনেই আলোচনা করা হয়, তাহলে তা মানহানিকর বলে গণ্য হবে, যা গীবতের চেয়েও বড় গুনাহ। গীবতের এই ভয়াবহতা কেবল পার্থিব জীবনেই সীমাবদ্ধ নয়, পরকালেও এর ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে। হজরত আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যখন আমার রব আমাকে ঊর্ধ্বাকাশে নিয়ে যান, তখন এক পর্যায়ে আমি এমন কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ (শক্ত) তামার তৈরি। তারা তাদের চেহারা ও বক্ষ নিজেরাই খামচে আহত করছে। আমি জিবরাঈল (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হচ্ছে সেই সব পাপিষ্ঠ যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করে এবং তাদের সম্মানহানি করে থাকে।" (মুসনাদে আহমদ: ১১৫)। এই হাদিসটি গীবতকারীদের জন্য এক কঠোর সতর্কবার্তা।

বিভিন্ন সূত্রমতে, গীবতের কাফফারা বা প্রায়শ্চিত্ত হলো, যার গীবত করা হয়েছে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া, যদি তার কানে সেই গীবতের খবর পৌঁছে থাকে। আর যদি সে না জানে বা মারা গিয়ে থাকে, তবে তার জন্য তওবা ও ইসতিগফার করা। গীবত কোনো ছোট গুনাহ নয়; এটি অত্যন্ত বড় গুনাহ এবং এটি বান্দার হক সম্পর্কিত। অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা বান্দার হক যতক্ষণ না সেই বান্দা ক্ষমা করেন, ততক্ষণ ক্ষমা করেন না। তাই গীবতের মতো জঘন্য অপরাধ থেকে নিজেদের বাঁচানো এবং অন্যের সম্মান রক্ষা করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অত্যাবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে গীবত থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন, আমিন।