মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২
হানজালা (রা.)

ফেরেশতারা যার গোসল দিয়েছিলেন

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২১, ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম

ফেরেশতারা যার গোসল দিয়েছিলেন

সংগৃহীত ( প্রতীকি ছবি )

হানজালা (রা.) ছিলেন মদিনার অন্যতম প্রভাবশালী নেতা আবু আমিরের পুত্র। আশ্চর্যজনকভাবে, তাঁর পিতা আবু আমির ছিলেন মুনাফেক এবং নবীজির শুভাগমনের পূর্বে শেষ নবীর আগমনের সুসংবাদ শোনাতেন। কিন্তু নবীজির শুভাগমনের পর আবু আমির মুনাফেকি নীতি অবলম্বন করেন এবং উহুদের যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনীর সঙ্গে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তীতে তিনি রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। এই কারণে রাসুল (সা.) তাঁকে ‘ফাসিক’ বলে অভিহিত করেন।

যেখানে তাঁর পিতা কুফরে নিমজ্জিত, সেখানে হানজালা (রা.) ছিলেন ঈমান, তাকওয়া ও সাহসিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি একবার নবীজিকে (সা.) বলেছিলেন, "আল্লাহর রাসুল, যদি আপনি আদেশ দেন, আমি নিজ হাতে আমার পিতা আবু আমিরকে হত্যা করতে প্রস্তুত।" নবীজি (সা.) অবশ্য তাঁকে এ থেকে নিবৃত্ত করেন। (আল-ইসাবা: ১/৩৬১)

উহুদ যুদ্ধে হানজালা (রা.)-এর শাহাদাত:

হানজালা (রা.) বদর যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি, তবে উহুদ যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন; আর এটাই ছিল তাঁর মুসলিম জীবনের প্রথম ও শেষ যুদ্ধ। যুদ্ধের আগের রাতে তিনি সদ্যবিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। এমন সময় জিহাদের ডাক আসে এবং তিনি গোসল অসমাপ্ত রেখেই উহুদ প্রান্তরে উপস্থিত হন।

রণক্ষেত্রে তিনি মুখোমুখি হন কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ইবনে হারবের। তাকে প্রায় পরাস্ত করে ফেলেছিলেন; কিন্তু ঠিক তখনই শাদ্দাদ ইবনে আসওয়াদ নামের এক শত্রুসেনা পেছন থেকে এসে আঘাত করে তাঁর মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। (সিরাতে ইবনে হিশাম: ২/৭৫)

এই উহুদ যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবি শহিদ হন। যুদ্ধ শেষে আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজ হাতে শহিদদের লাশ একত্র করছিলেন। গুনে গুনে ৬৮ জনের লাশ পাওয়া গেলেও তাঁর প্রিয় চাচা হামজা (রা.) এবং সদ্যবিবাহিত সাহাবি হানজালা (রা.)-এর লাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। নবীজি (সা.) অস্থির হয়ে ওঠেন।

ফেরেশতাদের গোসল ও উপাধি ‘গাসিলুল মালায়িকা’:

এমন সময় আপাদমস্তক ঢাকা এক নারী এসে নবীজিকে জানান, গত রাতে তিনি যে বিয়ে পড়িয়েছেন এবং খেজুর ছিটিয়েছেন, সেই বিয়ের বধূই তিনি। নারীটি বললেন, "এই দেখুন আমার হাতের মেহেদি এখনো শুকায়নি। যাওয়ার আগে লজ্জায় আমি তাঁকে বলতেও পারিনি যে, আপনার গোসল বাকি রয়ে গেছে।" প্রিয় সাহাবির এমন আবেগ দেখে নবীজি (সা.) তখন কাঁদতে লাগলেন।

কিছুক্ষণ পর এক সাহাবি জানান, "হানজালার মরদেহ পাওয়া গেছে।" নবীজি দেখেন, তাঁর লাশ থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে। নবীজি তখন হানজালার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। জিবরীল (আ.) এসে বললেন, "আল্লাহর রাসুল, হানজালার ঘটনায় আল্লাহ এত খুশি হয়েছেন যে, তিনি ফেরেশতাদের আদেশ করলেন তাঁকে জমজমের পানি দিয়ে গোসল করাতে।" (আল-ইসতিয়াব: ১/২৮০-২৮২; হায়াতুস সাহাবা: ২/২১৮)

এ কারণে তার উপাধি হয়—‘গাসিলুল মালায়িকা’, অর্থাৎ ‘ফেরেশতাদের গোসলকৃত’। (হায়াতুস সাহাবা: ২/২১৮)

হানজালা (রা.)-এর বংশধর:

পরবর্তী সময়ে হানজালা (রা.)–এর ঔরস থেকে জন্ম নেয় এক পুত্র—আবদুল্লাহ। নবীজি (সা.)-এর ওফাতের সময় তাঁর বয়স ছিল সাত-আট বছর। ৬৩ হিজরিতে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার বাহিনী মদিনায় হামলা চালায়, ইতিহাসে যা ‘ওয়াকিয়ায়ে হাররা’ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে আবদুল্লাহ (রা.) ইয়াজিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং তাঁর আটজন সন্তান শহিদ হয়। তিনি নিজেও শহিদ হন। (হায়াতুস সাহাবা: ২/২১৮)